আকাশে ভাসমান মেঘপুঞ্জ আর নীচে দিগন্ত জোড়া পদ্মফুলের মেলা দুরন্ত কৈশরকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। এমনি একটি জায়গা হল ভুতিয়ার বিল। খুলনা শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটরের দূরে তেরখাদা উপজেলার আঠারবাকী নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নড়াইল জেলার অংশ বিশেষ নিয়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে ভূতিয়ার বিল। বিলটি প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর হলেও ৪০ থেকে ৫০ হেক্টর জমিতে পদ্মফুল ফোটে। বাকি অংশ হোগলা আর শেওলাতে ঠাসা। বিস্তৃত জলরাশির বুকে দলবেধে যতদূর চোখ যায় শুধু পদ্ম আর পদ্ম। জলের ওপর বিছানো সবুজ পাতা ভেদ করে লাল-সাদা-গোলাপী পদ্মগুলো যেন গায়ে গা লাগিয়ে সৌন্দর্যের ডালি খুলে বসেছে। সৌন্দর্যের ডালি মেলানো এই পদ্মের সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হবে। ভাসমান একেকটি পদ্মের রূপশোভা অভিভূত করে যে কাউকে। জলজ ফুলের রানি পদ্মের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে তুলতে পারেন অসংখ্য ছবি। প্রকৃতির এই যৌবনাবতী রূপ-রসের সৌন্দর্য শুধু প্রকৃতিপ্রেমীর কাছে নয়, পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিদেরও করেছে বিমোহিত। তাই পেলে যে কেউ ছুটে আসে তেরখাদার বিখ্যাত পদ্মবিলে।

হোগলাবন, কচুরিপানার মধ্য দিয়ে ছোট ডিঙি নৌকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরে বেড়াতে ক্লান্ত হবেন না কেউ। পদ্মপাতার জলে বিলিয়ে দিতে ইচ্ছে করবে নিজেকে। ফুটে থাকা অজস্র পদ্ম ছবির মতো সাজানো, হৃদয়কাড়া দৃশ্য দেখেই মনে হবে সেই চিরায়ত গ্রাম-বাংলার রূপ।এ বিলের প্রকৃত রূপ ও শোভা উপভোগ করতে যাওয়ার উপযুক্ত সময় বিকাল বেলা।
কিভাবে যাবেন
১. বাসযোগে
ঢাকার গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, এবং গাবতলী বাস টার্মিনাল হতে বিভিন্ন মানের বাসে চড়ে খুলনা যেতে পারবেন। খুলনা সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে নেমে ইজিবাইক কিংবা রিক্সাযোগে সরাসরি হাদিস পার্কে যাওয়া যায়। ইজিবাইকে জনপ্রতি ২০-৩০ টাকা এবং অটোরিক্সাতে ৫০ টাকা দিয়ে সহজে হাদিস পার্কে যেতে পারবেন।
২. ট্রোনযোগে
ঢাকা থেকে সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন যথাক্রমে ভোর ৬ টা ২০ এবং সন্ধ্যা ৭ টায় খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সুন্দরবন এক্সপ্রেস বুধবার এবং চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সোমবার যাত্রা বিরতিতে থাকে। ট্রেনগুলিতে চড়তে জনপ্রতি টিকেটের মূল্য শোভন চেয়ার ৫০৫ ও স্নিগ্ধা এসি ৮৪০ টাকা এবং টিকেটের মূল্যের সাথে ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য।
৩. খুলনা থেকে ভূতিয়ার বিল
খুলনা শহরের জেলখানা ঘাট পার হয়ে প্রায় ১৮ কিলোমিটার পর তেরখাদা বাজার। বাস বা টেম্পুতে সেখানে যাওয়া যায়। তেরখাদা বাজারে নেমে ইজিবাইক যোগে চরকুশলা গ্রামের পদ্মবিল পৌঁছানো যাবে। খুলনা শহর থেকে বিলে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। কম খরচে যেতে চাইলে জেলখানাঘাট পার হয়ে সেনের বাজার থেকে তেরখাদাগামি বাসে উঠতে হবে। তেরখাদার দুই-তিনটা স্টপেজ আগেই হাড়িখালী নামক স্থানে নামতে হবে। সেখানে ইজিবাইক নিয়ে চরকুশলা গ্রাম। এভাবে যেতে সবমিলিয়ে ঘন্টা দেড়েক সময় লাগে।
পদ্মবিলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। পুরো পদ্মফুলের এলাকাটা নৌকায় ঘুরিয়ে দেখাতে ভাড়া ২০০ থেকে ৫০০ টাকা লাগে। ছোট নৌকাগুলোতে ধারণ ক্ষমতা ২-৩ জনের। এই বিলের আশেপাশে ভালো কোনো দোকানপাট বা খাবার হোটেল নেই। তাই ভ্রমণ করতে গেলে সঙ্গে করেই খাবার ও পানীয় নিয়ে যাবেন।
কোথায় থাকবেন
খুলনা শহরে বিভিন্ন মানের সরকারী ও বেসরকারি আবাসনের ব্যবস্থা আছে। বেসরকারি হোটেলের মধ্যে টাইগার গার্ডেন ইন্টার ন্যাশনাল হোটেল, সিটি ইন লিমিটেড, হোটেল ক্যাসল সালাম, ওয়েস্টার্ন ইন, হোটেল হলিডে ইন্টারন্যাশনাল ও হোটেল মিলেনিয়াম উল্লেখযোগ্য।
খুলনার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
- খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর
- খান জাহান আলী সেতু
- বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি
- কবি কৃষ্ণচন্দ্র ইনস্টিটিউট
- দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স
- ওআইসি রিসোর্ট
- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- খুলনা জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পার্ক (গিলাতলা পার্ক/বনবিলাস)
- গল্লামারী লিনিয়ার পার্ক
- শেখ রাসেল ইকোপার্ক
- রানা রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
- সোনাডাঙ্গা সোলার পার্ক
- শিরোমণি স্মৃতিসৌধ
- পিঠাভোগ, বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসতভিটা
- ধামালিয়া জমিদার বাড়ি
- প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বাড়ি
- কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র
- মসজিদকুঁড় মসজিদ
বিশেষ সতর্কতা
হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। একারণে কোন স্থানে ভ্রমণের পূর্বে বর্তমান ভাড়া ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিবেন। ওয়েবসাইটে যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রদত্ত নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্য চলো ঘুরি কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।