বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহৎ বদ্বীপ। এই বদ্বীপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান কক্সবাজার। সারা বছর এখানে দেশী বিদেশী পর্যাটকেরা ভ্রমণ করতে আসেন। এখানের সমতল ভুমির, পাহাড়ের, নদীর, সমুদ্রের, সৃষ্টির মহনীয় সৌন্দর্য দর্শন ও উপভোগ করতে আসেন। সুনীল সাগরের ও স্থলভূমির মিলনস্থলটির সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য প্রতিটি পর্যাটকে আকর্ষিত করে তোলে। বিশ্বের সব থেকে বড় সমুদ্র সৈকতের জন্যে এটি সারা বিশ্বের কাছে সমাদৃত। কক্সবাজার ২,৪৯১.৮৬ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
১. সেন্টমার্টিন দ্বীপ
বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দূরত্বে মায়ানমার উপকুল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত একমাত্র প্রবল দ্বীপ “সেন্টমার্টিন দ্বীপ”। বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীর পাড় দিয়েই যেতে হয় সেন্টমার্টিনে। ২৫০ বছর পূর্বে আরবের কিছু নাবিক দ্বীপটির আবিস্কার করে। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরা বা দারুচিনি দ্বীপ বলেও ডাকা হয়।

উত্তর দক্ষিণে লম্বা সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার। দ্বীপটির ভূপ্রকৃতি প্রধানত সমতল তবে কিছু কিছু বালিয়াড়ি দেখা যায়। দেশের মূল ভূখণ্ডের অংশ হয়েও যেন বিচ্ছিন্ন সেন্টমার্টিন। দ্বিপটিতে কিছু কৃষি উৎপাদন হয়ে থাকে। দ্বীপের মধ্য ও দক্ষিন এলাকা মূলত কৃষিজমির অন্তর্গত। দ্বীপের লোকসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এখানে ছয় হাজারেরও বেশি লোক বসবাস করে। তাদের প্রধানপেশা মাছ ধরা বলেই সেন্তমার্টিনকে জেলেদের স্বর্গ দ্বীপ বলা হয়।
এছাড়াও দ্বীপবাসী মাছ, নারিকেল, পেজাল এবং ঝিনুক ব্যবসা করে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪ প্রজাতির উভয়চর, ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১২০ প্রজাতির পাখি, স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া, ঝিনুক পাওয়া যায়। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় পেজালা নামের সামুদ্রিক শৈবাল এখানে প্রচুর পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপদের ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে জায়গাটি খ্যাত। দ্বিপটিতে নারিকেল গাছ ছাড়াও প্রচুর পরিমান কেওড়ার ঝোপ ঝাড় আছে। কেওড়া গাছ ঝড় জলোচ্ছ্বাসকে কিছুটা হলেই দ্বীপবাসীকে রক্ষা করে।
তাছাড়াও রয়েছে কেয়া, শেওড়া, সাগরলতা, বাইন, পাম ইত্যাদি গাছ । প্রতিদিন মূল ভূখণ্ড থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে অসংখ্য পর্যাটকেরা ট্রলার, লঞ্চ, জাহাজ নিয়ে ঘুরতে আসেন। সমুদ্রে স্নানের পূর্বে জোয়ার ভাটার সময়টা লক্ষ রেখে পর্যাটকেরা দ্বীপের সমুদ্র সৈকতের স্বচ্ছ পানিতে নামার আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। সূর্যের আলোয় স্বচ্ছ সমুদ্রে এসে দাঁড়ালে একেবারে নীচ অবধি দেখা যায় সামুদ্রিক জীবন। সমুদ্র সৈকতের কাছের হুমায়ুন আহমেদের কটেজ “সমুদ্র বিলাস” দেখতে পাবেন। তাছাড়াও পর্যাটকেরা ভ্যান ভাড়া করে পুরো দ্বীপটির স্থলভুমির বনাঞ্চল ও স্থানীয় লোকাল জায়গা গুলো ঘুরে দেখতে পারেন। যেমন পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখতে পারবেন তেমনি এই আনন্দময় ভ্রমণ আপনাকে সবসময় মোহিত করবে। সমুদ্র তীরে হাঁটতে থাকলে দেখতে পাওয়া যায় কাঁকড়ার আবাস।
নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ এ দ্বীপকে করেছে অনন্য। সেন্টমার্টিন দ্বীপের পাড় থেকে সমুদ্রে জেলেদের সারি সারি মাছ ধরার নৌকা আর দূরের অস্পষ্ট মায়ানমারের পাহাড়শ্রেণী সমূহ দেখা যায়।
সেন্টমার্টিনের দৃশ্য যা পর্যাটকদের দুর্নিবার আকর্ষণে কাছে টানে। সমুদ্রপ্রেমিদের কাছে সেন্টমার্টিন ব্যাপক পরিচিত একটি নাম। সেন্টমার্টিন্ দ্বীপের আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল।
যেভাবে যাবেন
টেকনাফ জেটি ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনের সমুদ্র পথে প্রতিদিন সকাল থেকে চলাচল করে জাহাজ, ট্রলার, স্পিডবোট। পর্যাটক যদি উত্তেজনাপুর্ন অবিজ্ঞতা প্রিয় হলে উত্তাল সাগরে ট্রলার যোগে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।
কোথায় খাবেন
সেন্টমার্টিনে খাবারে সবথেকে প্রসিদ্ধ হল ডাব। সেন্টমার্টিনের হোটেল রেস্তোরাঁ গুলোতে মাছ পছন্দকারিদের জন্য সেন্টমার্টিনের কোরাল, সুন্দরি পোয়া, ইলিশ, রূপচাঁদা, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি নানা ধরণের স্বাদে রান্না বা ভাজা মাছ পাওয়া যায়। সুযোগ হলে মুরগি রান্না খেয়ে দেখতে পারেন। তাছাড়াও জানাঅজানা নানা ধরণের শুঁটকির ভান্ডার তো আছেই।
কোথায় থাকবেন
সেন্টমার্টিনে রাতে থাকার জন্য বেশ কিছু উন্নতমানের হোটেল কটেজ রয়েছে। যেমন-
২.ছেড়া দ্বীপ

সেন্টমার্টিন ছেড়ে ৮ কিলোমিটার দক্ষিনে সর্বশেষ ভূখণ্ড। এর পরে বাংলাদেশে আর কোন ভূখণ্ড নেই। মূলত জোয়ারের সময় দ্বীপটি সেন্টমার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলেই এই দ্বীপপুঞ্জের নাম “ছেড়া দ্বীপ”। জোয়ারের সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে নৌকা নিয়ে যেতেই দুই ঘণ্টার মধ্যে দেখা মিলে বালু আর প্রবল পাথরে কেওড়া বনে ঘেরা ছেড়া দ্বীপ। তবে ভাটার সময় হেঁটেই ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়া যায়। দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ জোয়ারের সময় সাগরের পানিতে ডুবে যায়, আর সাগরের নীল ঢেউ যখন পাথরের গায়ে আছড়ে পরে তখন এক মোহনীয় দৃশ্যের অবতারণ হয়। দূর থেকে দেখলে মনেহয় সাগরের মাঝে ভাসমান একটি বন। নীল জলরাশির মাঝখানে প্রবল পাথরের তৈরি এই ছেড়া দ্বীপটি। এর আয়তন ৩ কিলোমিটার। দ্বীপটি সম্পূর্ণ প্রবল, পাথর, আর নারিকেল গাছে পরিপূর্ণ এবং রয়েছে চারপাশে কেওড়া গাছের বিস্তার। চিকচিক বালুর উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উপভোগ করা যায় বঙ্গোপসাগরের ঢেউ এর খেলা। ছেড়া দ্বীপটিতে হোসেন আলীর মোট ছয় জন সদস্যের একটি মাত্র পরিবার এই বসবাস করে। দ্বীপে তাদের “মৌসুমি” নামে একটি হোটেল আছে।
ছেড়া দ্বীপে নানা প্রজাতির জীব বৈচিত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। যার মধ্যে রয়েছে ৪ প্রজাতির উভয়চর, ১৩০ প্রজাতির পাখির, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী সামুদ্রিক জীবের আবাসস্থল এই ছেড়া দ্বীপ। শীতকালে এই দ্বীপে প্রচুর অতিথি পাখি এসে থাকে। পর্যাটকদের ছেড়া দ্বীপে যাওয়ার জন্য সমুদ্রের জোয়ারের অপেক্ষা করতে হয়। চাঁদিনী রাতে যেকোনো পর্যটকের মন ভরে যাবে ছেড়া দ্বীপের অপরূপ শোভা দর্শন করে। দ্বীপের উপরের দিকে ভরা পূর্ণিমাতে ক্যাম্পিং করে চাঁদের আলোয় জাদুকরী মুগ্ধকর পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষিত করে।
যেভাবে যাবেন
কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন আসার পথে একমাত্র ব্রিজের কাছ থেকে ছোট নৌকা বা ট্রলার চড়ে যাওয়া যায় ছেঁড়া দ্বীপে। কিন্তু ভাটার সময় সেন্টমার্টিন থেকে হেঁটেও যাওয়া যায় ছেড়া দ্বীপে।
কোথায় খাবেন
ছেড়া দ্বীপে আছে খাওয়ার মতো উল্লেখযোগ্য ডাব ও তরমুজ। তাছাড়া পর্যাটকেরা হোসেন আলী সাহেবের মৌসুমি হোটেল থেকে খাবার জন্য প্যাকেট জাতীয় শুকনো খাবার, জুস, পানি কিনে নিতে পারেন কিন্তু এখানে প্রতিটা পন্যের দাম একটু বেশি। এছাড়াও চাইলে দুপুরের খাবার খেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
সমুদ্রের জোয়ারে সময় ছেড়া দ্বীপের বেশির ভাগ জায়গা ডুবে যাওয়ার কারনে পর্যাটকদের থাকার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। তাই পর্যাটকদের সেন্টমার্টিন দ্বীপে বা কক্সবাজার শহরে ফিরে আসতে হবে।
আরো পড়ুন: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ
কক্সবাজার জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান
কক্সবাজার জেলা অসংখ্য পর্যটন এলাকা নিয়ে গঠিত। এ জেলার এ দর্শনীয় স্থানগুলো কক্সবাজার জেলাকে সাতন্ত্র্য দান করেছে। কক্সবাজার জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর সাথে অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্যও জড়িত। এ জেলার উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হল-
- হিমছড়ি
- কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত
- রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ড
- রামু বৌদ্ধ বিহার
- আদিনাথ মন্দির
- রামু রাবার বাগান
- কুতুবদিয়া
- মেরিন ড্রাইভ সোনাদিয়া দ্বীপ
- ইনানি সমুদ্র সৈকত
- লাবনী বিচ,
- শাহ পরীর দ্বীপ,
- ডুলহাজরা সাফারি পার্ক ইত্যাদি
অসাধারণ তথ্য উপস্থাপন করেছেন,আপনার এই তথ্য দিয়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম।অনেক ধন্যবাদ
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মতামতের জন্য। তথ্য সমৃদ্ধ আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের সাথে থাকার আহবান করছি।
Onek valo information soho article, Dhonnobad
Thank You very much for your valuable observation. Stay with us.