কক্সবাজারের ৩৯১.৭১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি উপজেলা। এর উত্তরে কক্সবাজার সদর উপজেলা, দক্ষিণে উখিয়া উপজেলা, পশ্চিমে কক্সবাজার সদর উপজেলা, পূর্বে নিইক্ষ্যাংছড়ি উপজেলা। ঢাকা গাবতলী বাস টার্মিনাল হতে কক্সবাজার ৪৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত রামুতে পর্যাটকদের জন্য সড়ক ও পরিবহনের ব্যাবস্থা ছাড়াও আছে নৌ যোগাযোগের সুবিধা। রামু কক্সবাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থান। গৌরবোজ্জ্বল অতীত অধ্যায়ের স্মৃতিচিহ্ন বহন করে আছে রামু উপজেলা। কালের পরিক্রমায় রাজা, রাজবংশ এখন আর নেই, তবুও এখনো টিকে আছে বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন। উপজেলা রামুর নামকরন হয় আরাকানের রাম রাজবংশের নামে। রামু বৌদ্ধ বিহারের বা মন্দিরের জন্যে বিখ্যাত। এখানে রয়েছে ছোট বড় অনেক বৌদ্ধ মন্দির। রাজারকুল এলাকায় পাহাড়চুড়ায় ‘রামকোট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার’ মন্দিরটি অবস্থিত। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ৩০৮ খ্রী: পূর্বে সম্রাট অশোক এটি নির্মাণ করেন। এর অভ্যন্তরে ২ টি বড় বৌদ্ধ মুর্তি আছে। এখানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ব্রোঞ্জ এর ১৩ ফুট উচু একটি বুদ্ধমূর্তি পাওয়া গিয়েছে। রামুতে বেশকিছু পর্যাটকদের দর্শনীয় স্থান আছে।
১. হিমছড়ি
কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে কলাতলী সৈকত থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি যাওয়ার পথে বামদিকে সবুজঘেরা পাহাড় আর ডানদিকে সমুদ্রের নীল জলরাশির মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের দর্শন হয়। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হিমছড়ি জলপ্রপাত। কক্সবাজারের স্থানীয়দের চিংড়ি হ্যাচারীর পথ ফেলে বেশ উঁচু একটা ব্রীজ পার হলে শুরু হবে হিমছড়ির স্থানীয়দের রাস্তা, এই রাস্তা নাকি তৈরি করে সেনাবাহিনীর। বর্ষার মৌসুমে হিমছড়ির ঝর্না গুলোকে অনেক বেশি জীবন্ত ও প্রাণবন্ত হয়ে যায়। এখানের প্রধান আকর্ষণ এখানকার ক্রিস্টমাস ট্রি। হিমছড়ি উদ্যানটি প্রায় চিরসবুজ ক্রান্তীয় বৃক্ষের বনাঞ্চল। হিমছড়ি বনের ১১৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৬ প্রজাতির উভয়চর, ২৮৬ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এই বনাঞ্চলে মায়া হরিণ, বন্য শুকর, বানর ও ভাল্লুকের আবাস্থল। পাহাড়ে ঝোপঝাড়ের সাথে সাথেও নানা ধরণের গাছও দেখতে পাওয়া যায়। হিমছড়ি পাহাড়ের চূড়ায় রিসোর্ট আছে যেখানে থেকে সমুদ্রের দৃশ্য পার্থিব মনে হয়। পাহাড়ের উপর থেকে পর্যটকদের জন্য সূর্যাস্ত উপভোগ করার, এবং উপর থেকে চারপাশের প্রকৃতি আকাশ থেকে সমুদ্রে ও স্থল ভুমিতে মিলে যাওয়ার মনোমুগ্ধকর অপরূপ দৃশ্য দেখার ব্যাবস্থা করা আছে। আরও দেখতে পাবেন বালির উপরে সারি সারি করে বেঁধে রাখা জেলেদের নৌকা আরো দেখতে পাবেন ঝাউবনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে সরু পথ। পাহাড়ের পাদদেশে আছে বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র, পিকনিক স্পট, ইকো পার্ক ও বার্মিজ মার্কেট। হিমছড়ি প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটকদের এক অনন্য আকর্ষণ। এখানে পর্যাটকদের সমুদ্রের সৈকতে ড্রাইভ করার সুবিধা আছে।
কিভাবে যাওয়া যাবে
কক্সবাজারের কলাতলী মোড় থেকে সব সময় খোলা জীপ হিমছড়ি এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এতে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৭০-১০০ টাকা, আর রিজার্ভ গেলে আলোচনা সাপেক্ষ্যে ১৪০০-১৬০০ টাকায় যাওয়া যায়। রিকশায় করেও হিমছড়ি যাওয়া আসায় ভাড়া লাগে ৩০০-৩৫০ টাকা কিন্তু ব্যাটারি চালিত রিকশাগুলোতে আসা যাওয়ার ভাড়া লাগে ৫০০-৬০০ টাকা।
২. রাবার বাগান
রাবার বাগান এর অবস্থান কক্সবাজার থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলায়। আজ দেশের অন্যতমস্থান দখল করে রেখেছে রামুর ঐতিহ্যবাহী এই রাবার বাগান। সারা বছর ভ্রমণ উপযোগী একটি জায়গা। এ রাবার বাগানের চারপাশে তাকালে দেখা মিলবে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়, ঢিলা ও বিস্তৃত সমভূমি। পাহাড়ের চূড়ার শেষ প্রান্তে আছে জেলার পুরনো বিশ্রামাগার। বাগানে বর্তমানে উৎপাদনক্ষম গাছ রয়েছে ৫৮ হাজার। একটি গাছ ২৫ বছর পর্যন্ত রাবার কষ উৎপাদন করে। ঐ কষ জমা করা হয় গাছের সাথে বেঁধে রাখা একটি পাত্রে। তারপর সব বারার কষ একত্রে প্রক্রিয়াকরণের জন্য কারখনায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাবার গাছ থেকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কেজি রাবার উৎপাদন হয়। বাগানের কারখানায় প্রতিদিন দুই হাজার কেজি রাবার উৎপাদন করা হয়। পর্যটকেরা বাগানের যত ভিতরে ঢুকবেন ততই তাদের বনের বিশলতা মুগ্ধ করবে। বর্তমানে দুই হাজার ছয়শত বিরাশী একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত বনটি। বাগানের মাঝখান থেকে একটি রাস্তা আছে ওখানে হাঁটার সময় মনে হয় বিদেশের সাজানো গোছানো বাগান। কার্বন শোষণ ও মাটির ক্ষয়রোধের মাধ্যমে রাবার বাগানের পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পাহাড়ি ঢিলা আর সবুজ ও সুশৃঙ্খল গাছের ছায়াতলে পর্যাটকেরা যদি নিজেকে বিলিয়ে দিতে চান তাহলে রামুর রাবার বাগান একটি আদর্শ স্থান।
কিভাবে যাওয়া যাবে
রামু চৌমুহনী ষ্টেশনের সড়ক পথ থেকে মাত্র চার কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত রামুর রাবার গাছের বাগানে রিক্সা, টেক্সী, গাড়ি বা অন্যান্য যানবাহন নিয়ে যাওয়া যাবে।
আইসোলেটেড নারিকেল
আইসোলেটেড নারিকেল বীজ বাগান রামুর চৌমুহনী স্টেশন থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে চট্টগ্রাম-টেকনাফ পার্শ্ববর্তী এলাকায় সরকারের যৌথ অর্থায়নে দক্ষিণে রাজারকুল ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ নারিকেল বাগান। সড়কের দুই পাশে সারি সারি নারকেল গাছ। সবুজে ঘেরা মনোরম বাগানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা গাছে ঝুলছে নারকেল ও ডাবের থোকা। সরকারীপৃষ্টপোষকতা ও উন্নয়নে যথাযথ উদ্যোগ নিলে রামুর নারিকেল বাগান দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ সহ অর্থনৈতিক দ্বার উম্মোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আইসোলেটেড নারিকেল বাগান ২০০ একরের বেশি জায়গা নিয়ে বিস্তৃত সারি সারি নারিকেল গাছ। চাষাবাদ শুরুর ১ দশকে রামুর নারিকেল বাগানটি পরিপূর্ণ রূপ পায়। প্রায় আড়াইশ একর আয়তনের নারিকেল বাগানাটিতে তখন রোপন করা হয়েছিল ৬০০ শ্রীলংকার কিংটন এবং মালেশিয়ার ডোয়ারব জাতের উচ্চফলনশীল চারা। এর মাধ্যমে নদী ও সাগরেরভাঙ্গন রোধ করা যাবে। প্রতিবছর এ বাগান থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার পিস নারকেল উৎপাদন করা হয়। এর পাশাপাশি বাগানে শাখা কলম দ্বারা বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও ওষুধি গাছের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এসব নারকেল ও উৎপাদিত চারা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হচ্ছে।প্রতিদিন দর্শনার্থীর পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে পর্যটন সম্ভাবনাময় এই নারিকেল বাগান। নারকেল বাগানটি দিন দিন ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়ত এখানে বেড়াতে আসছেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য দর্শনার্থী। সারি সারি নারকেল গাছ চারদিকে সবুজ আর সবুজ যেন প্রকৃতির অফুরন্ত সমাহার।
কিভাবে যাওয়া যাবে
রামু চৌমুহনী ষ্টেশন থেকে পাঁচ কিলোমটিার দক্ষিনে চট্টগ্রাম-টেকনাফ আরাকান সড়কের পাশে দিয়ে রিক্সা, টমটম, টেক্সী বা অন্যান্য যানবাহন নিয়ে যাওয়া যাবে।
কোথায় থাকবেন
রামুতে পর্যাটকদের থাকার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সুলভ মুল্যে মানসম্মত থাকার জন্য অনেক ব্যাবস্থা করা আছে। পর্যাটকদের রাত্রিযাপনের জন্য খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পেঁচার দ্বীপে মারমেইড বীচ রিসোর্ট, মারমেইড ইকো রিসোর্ট, সাম্পান ক্যাফে এন্ড রিসোর্ট রয়েছে। এছাড়াও রামুতে রয়েছে চৌমুহনী, চেরাংঘাটা, ঈদগড় ও উপজেলা গেইটে সুলভে থাকার মত হোটেল।
খাবারের ব্যাবস্থা
রামু উপজেলার পেঁচার দ্বীপ, চৌমুহনী, চেরাংঘাটা, ঈদগড় ও উপজেলা গেইটে সুলভ মুল্যে পছন্দের খাবার খাওয়ার জন্য প্রচুর স্থানীয় রেস্টুরেন্ট রয়েছে। কিন্তু সাধ্য অনুযায়ী খাবারের তালিকা নির্ণয় করার জন্য পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার অনুরধ রইলো। কারন খাবারের তালিকা অনুযায়ী একেক রেস্টুরেন্টে একেক ধরনের মূল্য তালিকা দেখা যায়।
ভাইয়া আপনার লেখা অনেক গোছালো এবং বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।ধন্যবাদ