পেকুয়া উপজেলার এর দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ

0
7
মগনামা ঘাট

চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তরে পেকুয়া উপজেলা অবস্থান। পেকুয়া উপজেলা ২৩ শে এপ্রিল, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন হতে সাতটি ইউনিয়ন বিচ্ছিন্ন করে নবগঠিত পেকুয়া উপজেলার গঠন হয়েছে। পেকুয়া উপজেলার আয়তন ১৩৯.৬৮ বর্গ কিলোমিটার।

পেকুয়া উপজেলার পশ্চিমে কুতুবদিয়া উপজেলা, দক্ষিণে মহেশখালী উপজেলা, পূর্বে চকরিয়া উপজেলা এবং উত্তরে বাসঁখালী উপজেলা অবস্থিত। পেকুয়া উপজেলার মানুষ সাধারণত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। এই উপজেলায় নৃতাত্বিক রাখাইন জনগোষ্ঠী বাস করে। যাদের ভাষার প্রভাব স্থানীয় ভাষায় লক্ষ্য করা যায়। পেকুয়া উপজেলাটি ভোলা খালের মাধ্যমে দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। নদীর দুই তীর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। মাতামুহুরী এবং পেকুয়া উপজেলার পাহাড়ী ছোট ছোট নদী হতে ভোলার খালের উৎপত্তি। এটি শিলখালী, বারবাকিয়া, পেকুয়া, মগনামা, উজানটিয়া হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলেছে। পূর্বে একসময় পেকুয়া উপজেলার প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হতো নদী। এখনও এই নদী দিয়ে অনেক জায়গা থেকে মালামাল পারিবারিক ও ভিবিন্ন বস্তু পরিবহণ করা হয়। এর সাথেই এই নদীতে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করে শীতকালীন সবজি ও ধান চাষে সুবিধা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা এই নদীর জলে কৃষি করে তুলনামূলক লাভ পান। এছাড়াও এই নদীতে অনেক মাছ পাওয়া যায়।

পৃথিবীর সাগর সীমানা বরাবর অবস্থিত এই অঞ্চলের মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই দুর্যোগী এবং সাগরের সাথে সংগ্রাম করে বেচে রয়েছে। এখানে খেলাধুলা ও বিনোদনের প্রতি আগ্রহ দেখা যায় প্রাচীনকাল থেকেই। ক্রিকেট ও ফুটবল ছাড়া বলী খেলা যা কুস্তি নামে এই অঞ্চলে পরিচিত তা এখনও খেলা হয় এবং প্রতি বছর বৈশাখ মাসে বিভিন্ন ইউনিয়নে এই খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

পেকুয়া উপজেলায় কয়েকটি খেলার মাঠ রয়েছে, যেমন পেকুয়া উপজেলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, বারবাকিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ এবং শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ। এই অঞ্চলে বিখ্যাত জ্ঞানী-গুণী লোকের জন্ম হয়েছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির পাশাপাশি খেলাধুলাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

১. মগনামা ঘাট

মগনামা ঘাট পেকুয়ার একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। এখানে পর্যটকরা দেখতে পাবেন সবচেয়ে পশ্চিম সীমান্তবর্তী মগনামা ঘাট, যেখানে বিশাল সমুদ্রের মাঝখানে অবারিত নির্মল হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দিয়ে মনের আনন্দে ঢেউ আর জেলেদের মাছ ধরার এক বিরল ছবি। মগনামা ঘাটের বৈশিষ্ট্য হল প্রকৃতির নির্মল হাওয়া ও জলের মাঝখানে বসে জলের খেলা দেখা এবং জেলেদের মাছ বিক্রি ও মগনামা থেকে কুতুবদিয়া যাত্রীদের ডিঙ্গি নৌকায় উঠানামা করার দৃশ্য। জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য দেখা খুবই আনন্দদায়ক। ঢেউয়ের তালে তালে ছোট বড় নৌকা সাম্পানের চলাচলের দৃশ্যটি কবির মনে কবিতার ছন্দ মিলিয়ে দেয়।

মনে হয় প্রাকৃতিক নির্মল ভারাক্রান্ত হাওয়া সমস্ত অজানা সুরের মধ্যে মন নিয়ে নেয়। ঘাটের সিঁড়িতে বসে মিতালীও জলের সাথে খেলা করা যায়। সন্ধ্যা বেলায় সূর্য ডুবার দৃশ্য সবার হৃদয়ে আনন্দের জন্ম দেয়। সাগরের ঐ তীরে একটি ছোট গ্রামে সূর্য হারিয়ে যাচ্ছে মনে হয়। মগনামা ঘাট ঘুরে দেখা যায়, কুতুবদিয়ার লোকজন মগনামা ঘাটে পারাপার করে নিয়ে যান। প্রতিদিন বেশ কিছু মানুষ এই ঘাটে পারাপার করে যান, কেউ নতুন বউকে সাথে নিয়ে যেতে পারে এবং কেউ প্রিয়তমার হাত ধরে হেঁটে যেতে পারে। এখানে অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে আসেন। প্রতিদিন বিকেলে পর্যটকদের ভিড় বেশী হয় এবং জুমাবার ও বৃহস্পতিবার পর্যটকদের বেশী হওয়া সাধারণ।

এখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের জন্য একটি কুলিং কর্নার স্থাপন করে চেয়ার টেবিল বসার ব্যবস্থা করেছে। তাছাড়া মগনামা ঘাটের হোটেলগুলো খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বর্তমানে বিনোদন প্রেমী এবং পর্যটকদের নিকট দিন দিন আকর্ষণীয় হচ্ছে মগনামা ঘাট।

২. পেকুয়া সুটকি বাজার

কুতুবদিয়া থেকে পেকুয়া যাওয়ার মাঝেমাঝি পড়ে এই বাজার। এখানে এখানে বিভিন্ন ধরনের শুটকি আপনি কম দামে শুটকি কিনতে পারবেন। যারা শুটকি পছন্দ করেন, তারা চাইলে আসার পথে নেমে কিনতে পারেন।

৩. মগনামা নেভাল

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকায় একটি জনপ্রিয় সৈকত, যার সামনে কুতুবদিয়া চ্যানেল এবং পেকুয়া উপজেলার ১৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১২৩ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এখানেই প্রস্তুত করা হয়েছে মগনামা নেভাল। প্রায় ২০০ জন স্থানীয় বেকার যুবকের সেচ্ছাশ্রম ও নিজস্ব অর্থায়নে বেড়িবাধেঁর দেওয়ালে সৌন্দর্যের জন্য রঙ করা হয়েছে। যাতে সুন্দর নেভালের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে স্থানীয় জেলেরা প্রতিদিন ছোট নৌকা ও ট্রলারে মাছ শিকার করে এনে ঘাটে এসে তা বিক্রি করে। ঘাট থেকে পাইকারী ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতারা জেলেদের কাছ থেকে কিনে থাকে। এখানে সাগরের তরতাজা মাছ পাওয়া যায়।

৪. পূর্বটইটং বনকানন

 কক্সবাজার জেলার জন্যে একটি সুপরিচিত এলাকা। এখানে রয়েছে সবুজের চাঁদরে ডাকা উঁচু উঁচু পাহাড়, পাহাড়ের পাদদেশে বয়ে গেছে আকাবাকা মেটো পথ, সু-উচ্চ পাহাড় থেকে অনবরত বেয়ে পড়ছে অসংখ্য ঝরণা। এসব ঝর্ণা থেকে সবুজ ফসলি জমির বুকচিরে বয়ে গেছে অসংখ্য ছোট নদী। নানা রকম ফসলী জমি চাষ করে প্রায় ৮০% লোক জীবিকা নির্বাহ করে। এ সব (শাক-সব্জি, ফল-মূল) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। বনকানন এ রয়েছে সু বিশাল মাঠ। কোরানের মাহাফিল ও বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে বছরে বেশ কয়েকটি সিরাত মাহাফিলের আয়োজন হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here