মহেশখালী উপজেলার দর্শণীয় স্থান ভ্রমণ

0
32
সোনাদিয়া দ্বীপ
সোনাদিয়া দ্বীপ

মহেশখালী উপজেলাটি কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। এর আয়তন ৩৮৮.৫০ বর্গ কিলোমিটার। ১৫৫৯ সালের প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারনে এটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন হয়ে একটি আলাদা পাহাড়ি দ্বীপ হিসেবে বাংলাদেরশের মানচিত্রে স্থান করে নেয়। প্রায় ২০০ বছর পূর্বে মহেশখালী নামকরণ করা হয় “বৌদ্ধ সেন মহেশ্বর” এর নাম নামানুসারে। তাছাড়াও ভিন্ন মতে জানা যায় যে জায়গাটি শিবের অপর নাম মহেশ আনুসারে নামকরণ হয়। এখানে আছে ঐতিহাসিক আদিনাথ মন্দির, বেশ কিছু বৌদ্ধ বিহার, জলাবন, বহু প্রজাতির নাম না জানা পশুপাখি, শীতকালে বহু অতিথি পাখির ভিড় হয়। দ্বীপের পাশে আছে চরপাড়া বিচ আর ঝাউবাগানের সমাহার। বন বিভাগের তৈরি সেগুন গর্জন গাছের ছোট ছোট বনভুমি মহেশখালীর অন্যতম আকর্ষণ।

১. বৌদ্ধ কেয়াং

মহেশখালীতে দার্শনিক স্থানের মধ্যে শতাব্দীর পুরাতন অন্যতম রাখাইন সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দির। মহেশখালী বাজারে প্রবেশের পর্বেই সড়কের বাম পাশেই অবস্থিত এই মন্দিরটি। এখানে বেশ কয়েকটি মন্দির ও বেশ কয়েকটি পিতলের মূর্তি আছে। আনুমানিক প্রায় ২৮৩ বছর পূর্বে মূল মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। মন্দিরে অনেক বৌদ্ধ মূর্তি আছে তারমদ্ধে পিতলের বড় মূর্তিটি বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম বৌদ্ধ মূর্তি। সীমা মন্দিরের দাঁড়ানো মূর্তিটি সম্পূর্ণ একটি গাছে খোদাই করে বানানো হয়েছিলো। গাছে খোদাই করা বৌদ্ধমূর্তি বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। এছাড়াও আছে ধর্মীয় পুকুরে নাগরাজের ফনার নিচে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বসা বৌদ্ধমূর্তি, আর আছে মাথায় হাত দিয়ে অর্ধ শায়িত অবস্থায় বৌদ্ধমূর্তি। মহেশখালীতে রাখাইন সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ মন্দিরে পর্যাটকদের সমাগম ঘটে।

২. আদিনাথ মন্দির

মহেশখালীর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫ মিটার উচ্চতায় ঠাকুরতলা গ্রামের মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় আদিনাথ মন্দিরটির অবস্থান। ১০.৫০ মিটার দৈর্ঘ্য, ৯.৭৫ মিটার প্রস্থ এবং  উচ্চতায় ৬ মিটার মন্দিরটি তিন ভাগে ভাগ করা। মন্দিরের প্রবেশ পথটি ধনুকের ন্যায় (ধনুকাকৃতির)। মন্দিরের উত্তর অংশ সবথেকে পুরাতন। এর পাশেই বর্গাকার দুইটি পুজাকক্ষ, সেখানে রয়েছে আদিনাথ শিবমূর্তি ও অষ্টভুজা দুর্গা মূর্তি। ৫০০ বছর পুরন মন্দিরের কারুকাজ আজও অপরূপ সৌন্দর্য ধরে রেখেছে। মন্দির পাহাড়ের চুড়ার উপরথেকে দেখা মিলে সমুদ্র আর মহেশখালী দ্বীপের চারদিকের খোলামেলা পাহাড়ি লীলাভূমির বৈচত্র্যের রূপ।

আদিরনাথ মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মন্দির কে কেন্দ্র করে আদিরনাথ মেলার প্রচলন চলে আসছে। প্রতিবছর শিব চতুর্দশী উপলক্ষে ১৪-১৬ ফাল্গুন মাসে (কৃষপক্ষের চতুর্দশীতে) সপ্তাহব্যাপী চলে হিন্দু পুন্যার্থীদের মিলনমেলা। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সহ ভারত, নেপাল থেকেও অনেক তীর্থযাত্রী ও পর্যাটকেরা এই সার্বজনীন মন্দিরে আর মেলায় আগমন ঘটে।

৩. সোনাদিয়া দ্বীপ

মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিমে ৭ কিলোমিটার বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে আকর্ষণীয় সোনাদিয়া দ্বীপ অবস্থিত। মহেশখালী গওরকঘাটা থেকে ঘটিভাঙ্গা চ্যানেল হয়ে যাবার সময় নদীর দুপাশে দেখা মিলে ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় বনের সমন্বয়ে একটি নির্জন দ্বীপ।

বালিয়াড়ি এই দ্বীপটিতে প্যারাবন, কেয়া-নিশিন্দার ঝোপ, লাল কাঁকড়া, সামুদ্রিক পাখি, আর সাগরের নীল জল সব মিলিয়ে যেন এক রোমাঞ্চকর পরিবেশে ঘেরা এই সোনাদিয়া দ্বীপ। এই দ্বীপটির আয়তন ৯ বর্গ কিলোমিটার। দ্বিপটিতে জনবসতি প্রায় ২০০০ জন। দ্বীপে তেমন কোন হাটবাজার নেই আছে ছোট ছোট কয়েকটা মুদির দোকান। দ্বীপের মানুষদের জীবিকা নির্বাহ করে মৎস্য আহরনে আর লবন চাষে। দ্বীপের বালিকাময় সৈকতে দাঁড়ালে দেখা যায় কাঁচের মত স্বচ্ছ টলটলে পানি আর চারপাশে লাল কাঁকড়ার ছুটাছুটি।

কিভাবে যাবেন

কক্সাজারের কস্তূরীঘাট থেকে ট্রলার কিংবা স্পিড বোটে মহেশখালী ১নং জেটি ঘাটে যাওয়া যায়। সড়ক পথে যেতে হলে চকোরিয়া হয়ে বদরখালী সেতু পারহয়ে সরাসরি মহেশখালী পৌছনো যায়। তবে এই পথে লোকাল কোন যানবাহন সুবিধা নেই তাই পর্যাটকদের যেতে হবে তাদের রিজার্ভ করা যানবাহন নিতে হবে।

কোথায় থাকবেন

মহেশখালীতে পর্যাটকদের থাকার মত তেমন কোন সুবিধা নেই তাই পর্যাটকদের রাতে থাকার জন্য কক্সবাজারে ফিরে আসতে হবে। তবে ওখানে কয়েকটা ছোট ছোট হোটেল আছে। আর স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সরকারি রেস্টহাউসে থাকা যেতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here