শায়েস্তা খানের স্মৃতি বিজড়িত স্থান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত লালবাগ কেল্লাটি। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহাজাদা আজম এই দুর্গটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। কিন্তু তিনি এই দুর্গের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে পারেননি। পরবর্তীতে শায়েস্তা খান সুবেদার হিসেবে এ অঞ্চলে আসলে তিনি পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্তু শায়েস্তা খানও এই দুর্গের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেননি। বর্তমানে দুর্গটি লালবাগ কেল্লা নামে পরিচিত হলেও প্রথমদিকে এর নাম ছিল আওরঙ্গবাদ দুর্গ। সম্রাট আওরঙ্গজেবের নামানুসারে দুর্গটির নামকরণ করা হয়। ১৮৪৪ সালে আওরঙ্গবাদ দুর্গটির নাম পরিবর্তন করে লালবাগ দুর্গ রাখা হয়। লালবাগ কেল্লা বর্তমানে লালবাগ জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির সমাধি, মসজিদ প্রভৃতি এই দুর্গে দেখা যায়। এই দুর্গের সাথে মিশে আছে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ছাপ। এজন্য প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী দুর্গটি দেখতে আসে, কেউবা আসে প্রাচীন ইতিহাস ঘেটে দেখার জন্য।

লালবাগ কেল্লায় দেখবেন
১. পরি বিবির মাজার

পরীবিবির মাজার ঢাকার লালবাগ এ অবস্থিত লালবাগ কেল্লার অবশিষ্ট তিনটি স্থাপনার মধ্যে অন্যতম। এখানে পরীবিবি সমাহিত আছেন। শায়েস্তা খান তার কন্যার স্মরণে এই মনমুগ্ধকর মাজারটি নির্মাণ করেন। পরিবিবি (যার অন্য নাম ইরান দুখত রাহমাত বানু) ছিলেন বাংলার মুঘল শায়েস্তা খানের কন্যা। মুঘল সম্রাট আওরংগজেবের পুত্র শাহজাদা আজম এর সাথে ১৬৬৮ ইং সালের ৩ মে পরিবিবির বিয়ে হয়। ১৬৮৪ সালে পরিবিবির অকাল মৃত্যুর পর তাকে নির্মানাধীন লালবাগ কেল্লার অভ্যন্তরে সমাহিত করা হয়। তার সমাধীস্থলকে চিহ্নিত করে পরিবিবির মাজার নির্মিত হয়।
পরিবিবির মাজার এর স্থাপনাটি চতুষ্কোন। মাঝের একটি ঘরে পরিবিবির সমাধিস্থল এবং এই ঘরটি ঘিরে আটটি ঘর আছে। স্থাপনাটির ছাদ পাথরের তৈরী এবং চারকোণে চারটি অষ্টকোণ মিনার ও মাঝে একটি অষ্টকোণ গম্বুজ আছে। গম্বুজটির উপরে পিতলের আচ্ছাদন দেওয়া আছে। স্থাপনাটির অভ্যন্তর ভাগ সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে আচ্ছাদিত।


২. লালবাগ শাহী মসজিদ

মুঘল স্থাপত্যশৈলীর সাক্ষ্য বহনকারী মসজিদ হল লালবাগ কেল্লা। লালবাগ শাহী মসজিদ ঢাকার লালবাগ কেল্লার সন্নিহিত স্থানে অবস্থিত। মসজিদটি নির্মাণ করা হয় ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে। তৎকালীন ঢাকার উপ-শাসক সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রপৌত্র ফর্রুখশিয়রের পৃষ্ঠপোষকতায় মসজিদটি নির্মিত হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে থাকা ঐতিহাসিক এ মসজিদটি এখনও জামে মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কেল্লার মূল দূর্গে ঢুকতে টিকেট লাগলেও। মসজিদটি সবার জন্যই উন্মুক্ত। বিশেষ পথ তৈরি এবং লোহার সীমানা প্রাচীর দিয়ে কেল্লার মূল স্থাপনা থেকে মসজিদটিকে আলাদা রাখা হয়েছে। এলাকার মানুষ নিয়মীত এখানে নামাজ আদায় করেন। কেল্লায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও এখানে নামাজ আদায় করেন। বাইরের রঙ কিছুটা চটে গেলেও ভেতরটা এখন ঝকঝকে। মুসল্লীদের আরামের জন্য মসজিদটি লাগানো হয়ে দামী দামী বৈদ্যুতিক ফ্যান। ঝলমলে রাখতে সাধারণ বৈদ্যুতিক বাতির পাশাপাশি রয়েছে অভিজাত ঝাড়বাতিও।
৩. লালবাগ জাদুঘর

লালবাগ প্রাসাদ-দুর্গ মোগল আমলের স্হাপত্য মহিমায় স্বয়ং- সম্পূর্ণ । এই স্হাপত্য নিদর্শনের পাশাপাশি মোগল আমলের জীবনধারা সম্বন্ধে আরো আলোকপাত করার অভিপ্রায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কয়েক বছর আগেই লালবাগ দুর্গ জাদুঘরের পরিকল্পনা হাতে নেয় । প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের সন্নিকটে অথবা অভ্যন্তরে নতুন কোন ইমারত স্হাপন করা প্রত্নতাত্ত্বিক রীতি বিরুদ্ধ ; তাই শাহজাদা আজক কর্তৃক নির্মিত দ্বিতল দরবার হলের স্বল্প পরিসরের মধ্যেই জাদুঘর স্হাপন করা হয়েছে । কক্ষাভ্যন্তরের অন্তঃপ্রবিষ্ট প্যানেল ও কুলুঙ্গিগুলোর আসল বৈশিষ্ট্যর কোনরূপ পরিবর্তন না করে ঐগুলোকেই প্রদর্শনী অআধার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ।
ইংরেজ আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতা উত্তরকাল পর্যন্ত বহু মূল্যবান প্রত্নদ্রব্য দেশের বাইরে পাচার হওয়ার ফলে ও যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে মোগল আমলের জিনিসপত্র এদেশে অত্যন্ত দুষ্পাপ্য । এতদসত্বেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর গত কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় কিছুসংখ্যক প্রত্নবস্তু সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে । এই সব প্রত্নবস্তুর মধ্যে রয়েছে মোগল আমলের অস্রশস্ত্র, পান্ডুলিপি, মুদ্রা, মৃৎশিল্প,কার্পেট, হস্তশিল্প ইত্যাদি ।
প্রদর্শিত দ্রব্যাদির মধ্যে মাত্র দুইটি জিনিস লালবাগ দুর্গের ইতিহাসের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে জড়িত । আর একটি হচ্ছে পরিবিবির মাজারে আল্গা অবস্হায় প্রাপ্ত কালো পাথরে উৎকীর্ণ লিপি ও আজম শাহের একটি প্রতিকৃতি । বাকী জিনিসগুলো লালবাগ দুর্গের সঙ্গে সরাসরিভাবে সম্পর্কিত না হলেও মোগল আমলের দীর্ঘ ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত । প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, বেশীরভাগ জিনিসই মোগল আমলের শেষ যুগের
লালবাগ কেল্লা পরিদর্শনের সময়সূচি
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্ব মাস (গ্রীষ্মকাল)
- রবিবার: সাপ্তাহিক বন্ধ
- সোমবার দুপুর ২.৩০ মিনিটি থেকে ৬ টা পর্যন্ত
- শুক্রবার: সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত (দুপুর ১:০০ থেকে ১:৩০ পর্যন্ত বন্ধ)
- সপ্তাহের বাকি দিন: সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত (দুপুর ১:০০ থেকে ১:৩০ পর্যন্ত বন্ধ)
অক্টোবর থেকে মার্চ (শীতকাল)
- রবিবার: সাপ্তাহিক বন্ধ
- সোমবার: দুপুর ২:৩০ থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত
- শুক্রবার: সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত (দুপুর ১২:৩০ থেকে ২:০০ পর্যন্ত বন্ধ)
- সপ্তাহের বাকি দিন: সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত (দুপুর ১:০০ থেকে ১:৩০ পর্যন্ত বন্ধ)
লালবাগ কেল্লা কিভাবে যাবেন
ঢাকার যেকোন স্থান হতে সহজে লালবাগ কেল্লায় যাওয়া যায়। তবে গুলিস্থান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এটি খুবই কাছে। সেক্ষেত্রে রিক্সাযোগে সহজে লালবাগ পৌঁছানো যায়। ঢাকার অন্যান্য এলাকা থেকে বাসযোগে সদরঘাট আসলে এখানে সহজে আসা যায়।
তাছাড়া সিএনজি করে সরাসরি লালবাগ কেল্লার গেটে নামা যায়। এক্ষেত্রে সিএনজি ভাড়া তুলনামুলকভাবে বেশি বিধায় যারা কম খরচে ভ্রমণ করতে চান তারা বাস কিংবা রিক্সা নিয়ে এখানে আসতে পারেন।
ঢাকার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান
- জাতীয় স্মৃতিসৌধ
- আহসান মঞ্জিল
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
- বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা
- বোটানিক্যাল গার্ডেন
- ধানমন্ডি লেক
- বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর
- ঢাকেশ্বরী মন্দির
- রমনা পার্ক
- হাতির ঝিল
- চন্দ্রিমা উদ্যান
- টাকা জাদুঘর
- মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
- শহিদ মতিউর রহমান পার্ক
বিশেষ সতর্কতা
হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। একারণে কোন স্থানে ভ্রমণের পূর্বে বর্তমান ভাড়া ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিবেন। ওয়েবসাইটে যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রদত্ত নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্য চলো ঘুরি কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।