কুতুবদিয়া উপজেলার দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ

0
69
কুতুবদিয়া বাতিঘর
কুতুবদিয়া বাতিঘর

কুতুবদিয়া উপজেলাটি কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে অবস্থিত একটি দ্বীপ। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা কুতুবদিয়া উপজেলাটির আয়তন ২১৬.৮০ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৮৩ সালে কুতুবদিয়া থানা থেকে জেলায় রূপান্তর করা হয়। সাগরের বুকে ভেসে থাকা এই দ্বীপটি ‘হযরত কুতুবুদ্দিন’ এর শ্রদ্ধান্তরে নামকরন করা হয় “কুতুবদিয়া”। নির্জন বেলাভূমিতে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। কিন্তু এই দ্বিপটিতে কুতুব আউলিয়ার মাজার, বাংলাদেশের সব থেকে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাতিঘর, লবন চাষের জমি সহ অনেক কিছু আছে দেখার মতো।  

 ১. কুতুবদিয়া চ্যানেল  

 কুতুবদিয়া দ্বীপে পৌঁছাতে হলে চাকরিয়ার মেগনামা বড়ঘোপ ঘাটে যেতে পাড়ি দিতে হয় কুতুবদিয়া চ্যানেল। বঙ্গোপসাগরের ২১ ডিগ্রী উত্তর থেকে ৯১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত বাংলাদেশের এই কুতুবদিয়া চ্যানেলটি স্থাপন করা হয়েছে। শীতে কিছুটা শান্ত থাকলেও সারাবছর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে বেশ উত্তাল থাকে কুতুবদিয়া চ্যানেলের সমুদ্রবক্ষ।

২. সমুদ্র সৈকত

কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকতটি উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ  বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর নীরব সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতটিতে পর্যাটকদের আনাগোনা অনেক কম, তাই নির্জন শান্ত কোমল সাগরের পাড়ে সঙ্গ দেওয়ার জন্য কিছু লাল কাঁকড়ার দল আর প্রচুর সামুদ্রিক পাখি ও গাংচিল নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায়। সৈকতের আসে পাশে আছে সারি সারি ঝাউগাছ। নীরব নির্জন সৈকতে মাঝে মাঝে জেলেদের ক্রিয়াকলাপ দেখতে পাওয়া যায়। দূরে সাগরের বুকে দেখা যায় নোঙ্গর ফেলা জাহাজ। কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দুর্দান্ত আকর্ষণীয় দৃশ্য ও জোয়ারের গর্জন প্রকৃতি প্রেমিকদের রোমাঞ্চিত করে তোলে।

৩. বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র

কুতুবদিয়া দ্বীপে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। ৫০টি পাখার সাহায্যে ১০০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয় করে গড়ে তোলা হয়েছে। কুতুবদিয়ার বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডের সাথে সংযুক্ত নয়। জেনারেটর টারবাইনে (বায়ুকল) বায়ুর শক্তিকে পাখা ঘোরানর কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। যা এই দ্বীপে সবচেয়ে বেশি সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দ্বীপে অবস্থানকারী প্রায় ৭৫০ গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়। আলোকিত দ্বীপে মনোরম পরিবেশের দর্শন করতে পর্যাটকেরা আসেন।

৪. কুতুবদিয়া বাতিঘর

 কুতুবদিয়ায় বাংলাদেশের একমাত্র বাতিঘরটি ১৮৪৬ সালে ব্রিটিশ সরকারের আমলে প্রথম তৈরি করা হয়েছিলো। সমুদ্র পথে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূর থেকে বাতি দেখে নাবিকদের জাহাজের গতিপথ নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করা হয়। ১৯৬০ সালে বাতিঘরটি বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বহুআগে বিলীন হয়ে যায়। সাগরের ভাটার সময় কখনো কখনো দেখা মিলে বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ। পুনরায় ষাটের দশকে আরেকটি বাতিঘর নির্মাণ করা হয়। সমুদ্র সৈকতের পথ ধরে বড়ঘোপ বাজার থেকে উত্তর দিকে কিছুদূরেই অবস্থিত বর্তমান বাতিঘর। যেটি দেখেতে হয় দূর থেকেই কারন ওখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।

৬. লবণ চাষ

কুতুবদিয়ার মানুষদের জীবিকা মূলত লবন চাষ আর শুটকি এর উপর নির্ভরশীল। দ্বীপের প্রায় সর্বত্রেই কম বেশি লবনের চাষ হয়। তবে কুতুবদিয়ার তাবলের চর, দরবারঘাট, কৈয়ার বিল, আলী আকবরের ডেল এলাকা গুলোতে লবন চাষের মাঠ সবচেয়ে বেশি। এখানে বছরে প্রায় ১৮ মেট্রিকটন এর বেশি লবন চাষ হয়। উপকূল ঘুরেই দেখামিলে অসংখ্য সাদা লবনের স্তূপ আর লবন কৃষকদের ব্যস্ততা। শীতের মৌসুমে লবন চাষ বেশি হয়। উপকুলের জমিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি জমিয়ে সূর্যের তাপে পানি শুকিয়ে লবন তৈরি করে কৃষকেরা।

৭. কুতুব আউলিয়ার দরবার

কুতুব আউলিয়ার পূর্বপুরুষের নামানুসারে কুতুবদিয়া দ্বীপের নামকরণ করা হয়। কুতুব আউলিয়ার মাজার কুতুবাগ এর প্রতিষ্ঠাতা শাহ আব্দুল মালেক আল কুতুবী। তিনি ১৯১১ সালে কুতুবদিয়া দ্বীপেই জন্মগ্রহণ করেন আর মারা জান ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০০ সালে। বর্তমানে তার পুত্র শাহাজাদা শেখ ফরিদ কুতুব দরবার শরীফের দায়িত্বে আছেন।

কিভাবে যাবেন

কক্সবাজার চাকরিয়া উপজেলা থেকে গাড়ি বা সিএনজি অটোরিকাশা নিয়ে মগনামা ঘাটে এসে ইঞ্জিন নৌকা বা স্পিডবোট নিয়ে সমুদ্রের কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়ে কুতুবদিয়া দ্বীপের বড়ঘোপ ঘাটে যেতে হয়।

কোথায় থাকবেন

কুতুবদিয়া দ্বীপে পর্যাটকদের থাকার জন্য বড়ঘোপ বাজারে সমুদ্র বিলাস নামে একটাই মানসম্মত হোটেল আছে।

খাবারের ব্যবস্থা

কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ বাজারে বেশ কয়েকটা খাবারের হোটেল আছে। সেখানে পাবেন প্যাকেট জাতকরন কিছু খাবার, আর খাবার পানি, ভাত, মাছ, মাংশ, শুঁটকি, ও নানা ধরনের ভর্তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here