খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর 

0
34
Khulna Divisional Museum
Khulna Divisional Museum

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণ করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য জাদুঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। এসব জাদুঘরগুলো জ্ঞানপিপাসু মানুষকে টেকে নিয়ে যায় হাজার হাজার বছর পূর্বের সময়ে, যা বাস্তবে সম্ভব নয়। দর্শনার্থী জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন জিনিসপ্রত্র দেখে যেমন মনের খোরাক মিটাতে পারে তেমনি জ্ঞানের পরিসীমা বাড়াতে পারে। জাদুঘরের প্রতিটি জড়বস্তু যেন মুখ ফুটে বলতে চায় সে সময়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য, জীবন ও সংস্কৃতি।

খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর খুলনা জেলার শিববাড়ী অবস্থিত একটি জাদুঘর। এ জাদুঘরটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের তত্তাবধানে জাদুঘরটি পরিচালিত। আয়তনের দিক থেকে এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাদুঘর। এ জাদুঘরে উপস্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন যুগের মৃৎপাত্র, হিন্দু ও বৌদ্ধ মুর্তি, শিলালিপি, পোড়ামাটির ফলকচিত্র, অলংকৃত ইট, পোড়ামাটির বল, পোড়ামাটির গুটিকা ইত্যাদি। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত নানান প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন বিশেষ করে ঝিনাইদহের বারবাজার, যশোরের ভরত ভায়ানা এবং বাগেরহাটের খানজাহান আলী সমাধিসৌধ খননের ফলে প্রাপ্ত নানান দুর্লভ নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে এ জাদুঘরে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রত্নস্হল ও ঐতিহাসিক ইমারতের আলোকচিত্রও আছে ।

এ জাদুঘরে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্য খ্যাত আলোকচিত্র দেখা যাবে, তার মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্য খ্যাত ষাটগম্বুজ জামে মসজিদ, নয়গম্বুজ মসজিদ, রনবিজয়পুর মসজিদ, জিন্দা পীরের মসজিদ, সোনা বিবির মসজিদ, সিঙ্গারা মসজিদ, দীদার খার মসজিদ, আনোয়ার খার মসজিদ, আহমদ খার মসজিদ, চিল্লাখানা, খানজাহান আলী (র.) এর বসতভিটা ও দীঘি, কোতয়ালী, কালোদীঘি, বিবি গোগিনীর মসজিদ এবং দশ গম্বুজ মসজিদসহ বৃহত্তর খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর অঞ্চলের। এছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতত্ত্ব স্থাপনার আলোকচিত্র দেখা যাবে এখানে।

আলোকচিত্র ছাড়া জাদুঘরে দেখা যাবে গুপ্ত, পাল, সেন, মোগল ও ব্রিটিশ আমলের নানা রকম পুরাকীর্তির নিদর্শন, পোড়ামাটির বিভিন্ন মূর্তি, কষ্টি পাথরের মূর্তি, কালো পাথরের মূর্তি, তামা, লোহা, পিতল, মাটি ও কাচের তৈজসপত্র, বিভিন্ন ধাতুর তৈরি অস্ত্র, বিভিন্ন খেলনা, নানা রকম ব্যবহার্য সামগ্রী, মোগল আমলের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রাসহ বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির হাজার বছরের পুরনো নিদর্শনসমূহ।

টিকিট সংগ্রহ ও পরিদর্শনের সময়

  • জনপ্রতি টিকেট এর দাম ১৫ টাকা করে (তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়েনা)।
  • মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশু-কিশোরদের জন্য প্রবেশ মুল্যে নির্ধারন করা হয়েছে ৫ টাকা।
  • সার্কভুক্ত বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য পঞ্চাশ টাকা এবং
  • অন্যান্য বিদেশী দর্শকদের জন্য টিকেটের মূল্য একশত টাকা করে।

জাদুঘরে প্রবেশের সময়সূচি

গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আর সবসময়ের জন্যই শুক্রবারে জুমার নামাজের জন্য সাড়ে ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রোববার সাধারণ ছুটি এবং সোমবার বেলা ২টা থেকে খোলা থাকে। এ ছাড়াও সরকারি কোনো বিশেষ দিবসে জাদুঘর বন্ধ থাকে।

কিভাবে যাবেন

১. বাসযোগে

ঢাকার গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, এবং গাবতলী বাস টার্মিনাল হতে বিভিন্ন মানের বাসে চড়ে খুলনা যেতে পারবেন। খুলনা সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে নেমে ইজিবাইক কিংবা রিক্সাযোগে সরাসরি হাদিস পার্কে যাওয়া যায়। ইজিবাইকে জনপ্রতি ২০-৩০ টাকা এবং অটোরিক্সাতে ৫০ টাকা দিয়ে সহজে হাদিস পার্কে যেতে পারবেন।

২. ট্রোনযোগে

ঢাকা থেকে সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন যথাক্রমে ভোর ৬ টা ২০ এবং সন্ধ্যা ৭ টায় খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সুন্দরবন এক্সপ্রেস বুধবার এবং চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সোমবার যাত্রা বিরতিতে থাকে। ট্রেনগুলিতে চড়তে জনপ্রতি টিকেটের মূল্য শোভন চেয়ার ৫০৫ ও স্নিগ্ধা এসি ৮৪০ টাকা এবং টিকেটের মূল্যের সাথে ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য।

৩. খুলনা থেকে খুলনা জাতীয় জাদুঘর

খুলনা জাতীয় জাদুঘর খুলনার শিববাড়ী মোড়ে অবস্থিত। ঢাকা থেকে অধিকাংশ বাসগুলো সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। একারণে সোনাডাঙ্গা থেকে মাত্র ৫ টাকা ইজিবাইক ভাড়া দিয়ে কিংবা ২০-৩০ টাকা দিয়ে জাতীয় জাদুঘর পর্যন্ত যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন

খুলনা শহরে বিভিন্ন মানের সরকারী ও বেসরকারি আবাসনের ব্যবস্থা আছে। বেসরকারি হোটেলের মধ্যে টাইগার গার্ডেন ইন্টার ন্যাশনাল হোটেল, সিটি ইন লিমিটেড, হোটেল ক্যাসল সালাম, ওয়েস্টার্ন ইন, হোটেল হলিডে ইন্টারন্যাশনাল ও হোটেল মিলেনিয়াম উল্লেখযোগ্য।

কোথায় খাবেন

খুলনা শহরের শিববাড়ী মোড়ে বেশকিছু ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। খুলনা শহরে খাবারের মধ্যে সন্দেশ, ১ টাকার পুরি, কাচ্চি বিরিয়ানি ও গলদা চিংড়ি প্রসিদ্ধ।

খুলনা শহরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ

  • খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর
  • শহিদ হাদিস পার্ক
  • খান জাহান আলী সেতু
  • বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি
  • কবি কৃষ্ণচন্দ্র ইনস্টিটিউট
  • ওআইসি রিসোর্ট
  • খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
  • খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
  • খুলনা জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পার্ক (গিলাতলা পার্ক/বনবিলাস)
  • জাতিসংঘ শিশু পার্ক
  • গল্লামারী লিনিয়ার পার্ক
  • শেখ রাসেল ইকোপার্ক
  • রানা রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
  • সোনাডাঙ্গা সোলার পার্ক
  • শিরোমণি স্মৃতিসৌধ
  • ভুতিয়ার পদ্মবিল
  • পিঠাভোগ, বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসতভিটা
  • ধামালিয়া জমিদার বাড়ি
  • প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বাড়ি
  • কাটকাটা পর্যটন কেন্দ্র
  • কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র
  • মসজিদকুঁড় মসজিদ

বিশেষ সতর্কতা

হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। একারণে কোন স্থানে ভ্রমণের পূর্বে বর্তমান ভাড়া ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিবেন। ওয়েবসাইটে যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রদত্ত নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্য চলো ঘুরি কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here