খুলনা শহরের কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাটকাটা বাজার সংলগ্ন সুন্দরবন ঘেঁষা এলাকাটি কাটাকাটা পর্যটন কেন্দ্র নামে পরিচিত। সুন্দরবনের অপরুপ দৃশ্য অবলোকন করার জন্য অসংখ্য মানুষ দক্ষিণবঙ্গের এই প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র ঘুরতে আসে। কাটকাটা লঞ্চঘাট সংলগ্ন স্থানটিকে কেন্দ্র করে মূলত পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে। সারাদিন পরিশ্রমের পর স্থানীয়রা একটু আরামের জন্য এখানে আসে। কাটকাটা পর্যটনকেন্দ্রটির একপাশে লোকালয় এবং অপরপাশে পৃথিবীর বিখ্যাত সেই ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন অবস্থিত। দাঁড় দিয়ে চালানো নৌকা কিংবা স্পিডবোটে করে সুন্দরবন ও এর আশেপাশে নৌবিলাস করা যায় এখান থেকে। কাটকাটা পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে ওঠার মূল কারণ হল সুন্দরবন। এজন্য দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবনকে কাছ থেকে দেখার জন্য ছুটে আসে। সুন্দরবন দেখার জন্য বাংলাদেশে আরো কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। তবে এ কেন্দ্রটির বিশেষত্ব হল এখানে ঘুরে দেখার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। একবারে মনখুলে ঘুরে ঘুরে সুন্দরবনের সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। কিছু সময়ের জন্য প্রকৃতি, বন আর সুন্দরবনের প্রাণিদের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে।

বিকালবেলা পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে নদীয় পাড়ে এরকম একটা স্থানে আড্ডা বেশ দারুন জমে।

সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশের পূর্বে শাকবাড়িয়া নদীয় তীরে আছড়ে পড়া টেউয়ের কলতান আর মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আপনাকে বিমোহিত করবে।

বর্ষা ঋতুতে সুন্দরবনের কেওড়া গাছগুলো কেওড়া ফলে নুয়ে পড়ে। চারদিকের অথই জলরাশি পাড়ি দিয়ে জঙ্গল থেকে কেওড়া ফল সংগ্রহ করার আনন্দ অন্যরকম।


বিকালে জোয়ারের সময় বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নদীর পাড়ে বসে সুন্দর সময় কাটানো যায়। এসময় লোকালয়, সুন্দরবন আর মাঝখানে বয়ে চলা শাকবাড়িয়া নদীর টেউ আপনার মনকে আন্দোলিত করবে। তাছাড়া কাটাকাটা পর্যটন কেন্দ্রের পাশে কিছু সংখ্যক আদিবাসী মুন্ডা জনগোষ্ঠীর বসবাস। যারা সংস্কৃতিপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমী তারা এখানে এই দুটো বিষয় একত্রে পাবেন।
কাটকাটা পর্যটন কেন্দ্রে বেড়ানোর জন্য বিকালের সময়টা বেশ উপযুক্ত। এসময় সূর্যের তীব্র তাপদাহ থাকে না। ফলে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে বেশ সুবিধা হয়।
এ্যাডভেঞ্চার সুন্দরবন (কাটকাটা পর্যটন কেন্দ্র)


কিভাবে যাবেন
১. সড়কপথে
জেলা শহর খুলনার সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া খুলনা সদর থেকে নদী পথে লঞ্চযোগে যাতায়াতেরও ব্যবস্থা রয়েছে। খুলনার সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে ১২০ টাকা ভাড়া দিয়ে পাইকগাছা জিরো পয়েন্ট মোড়ে নামতে হবে। এরপর জিরো পয়েন্ট থেকে ৬০ টাকা ভাড়া দিয়ে কয়রা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত আসা যায়। কয়রা বাসস্ট্যান্ড থেকে ৪০-৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে সরাসরি কাটাকাটা বাজার নামতে হবে।
২. নৌপথে
খুলনার রেলওয়ে লঞ্চঘাট কিংবা রূপসা বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন কয়রায় উদ্দেশ্যে লঞ্চ যাতায়াত করে। রেলওয়ে লঞ্চঘাট থেকে সকাল ১০ ঘটিকায় এবং রূপসা বাজার লঞ্চঘাট সকাল ১১ টার সময় লঞ্চ ছেড়ে যায়। নৌপথে সরাসরি কাটকাটা লঞ্চঘাটে অর্থাৎ কাটকাটা পর্যটন কেন্দ্রে নামা যায়। লঞ্চ ভ্রমণের সময় কিছুটা সুন্দরবন ভ্রমণ ও হবে। খুলনা থেকে কাটাকাটা লঞ্চঘাটে পৌঁছাতে ৮-৯ ঘন্টা লাগতে পারে।
৩. কয়রা থেকে কাটকাটা পর্যটন কেন্দ্র
কয়রা বাজার থেকে ইজিবাইক, মোটরভ্যান এবং মোটর সাইকেলযোগে কাটকাটা বাজারে নামতে হবে। যানবাহন ভেদে ভাড়ার তারতম্য আছে, তবে মোটামুটি ৩০-১০০ টাকার মধ্যে।
কোথায় খাবেন
কয়রায় আবাসিক হোটেল সংলগ্ন জায়গায় বেশকিছু খাবার হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে মাছ মাংস, ডিম, সবজি প্রভৃতি খাবার পাওয়া যায়। অরা যারা কাটকাটা পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে যাবেন তাদের জন্য পর্যটন কেন্দ্র লঞ্চঘাট এলাকায় মুক্তা রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সেখান থেকে কিছু চাইনিজ ও দেশি খাবার খাওয়া যায়। এছাড়া সুন্দরবন ভ্রমনের পূর্বে পানি এবং কিছু শুকনো খাবার সাথে নেওয়া ভাল।
কোথায় থাকবেন
কয়রা উপজেলা সদরে বেশ কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে। এ হোটেলগুলোতে ২৫০-৫০০ টাকার মধ্যে রাত্রিযাপন করা যায়।
হোটেলের নাম | যোগাযোগ |
---|---|
জাকারিয়া হোটেল | মো: শাহাবুদ্দিন সর্দার মোবাইল নং-০১৯৪৩-৫১৫৫৯৫ |
খুলনার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
- খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর
- খান জাহান আলী সেতু
- বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি
- কবি কৃষ্ণচন্দ্র ইনস্টিটিউট
- দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স
- ওআইসি রিসোর্ট
- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- খুলনা জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পার্ক (গিলাতলা পার্ক/বনবিলাস)
- গল্লামারী লিনিয়ার পার্ক
- শেখ রাসেল ইকোপার্ক
- রানা রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
- সোনাডাঙ্গা সোলার পার্ক
- শিরোমণি স্মৃতিসৌধ
- ভুতিয়ার পদ্মবিল
- পিঠাভোগ, বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসতভিটা
- ধামালিয়া জমিদার বাড়ি
- প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বাড়ি
- কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র
- মসজিদকুঁড় মসজিদ
বিশেষ সতর্কতা
হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। একারণে কোন স্থানে ভ্রমণের পূর্বে বর্তমান ভাড়া ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিবেন। ওয়েবসাইটে যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রদত্ত নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্য চলো ঘুরি কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।