দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় অবস্থিত। ৬৯৭.৫৬ একর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধুমাত্র জ্ঞানগৃহ নয়, এ যেন এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ আর বিভিন্ন জীববৈচিত্র্যের সম্মিলন বিদ্যাপীঠকে স্বতন্ত্র্য একটি রূপ দিয়েছে। ১৯৭০ সালে দেশের বৃহত্তম এবং একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরো ক্যাম্পাস প্রথম দেখাতেই যে কাউকে মুগ্ধ করে দিবে আর এখানকার বিশুদ্ধ নির্মল বাতাস শীতল করে দিবে দর্শনার্থীর হৃদয়কে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাসটাকেই প্রকৃতি এক নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে রেখেছে, যা যে কোন মানুষের দুঃখ কষ্ট অবসাদ নিমেষেই ভুলিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল ইটের তৈরি ভবনগুলো এবং চারপাশে সবুজের সমারোহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যকে আরে বৃদ্ধি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০০ একর জায়গা জুড়ে আছে প্রজাপতি গার্ডেন৷ একারণে অতিথি পাখি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ক্যাম্পাসটি ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য অন্যতম পছন্দের এক জায়গা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৭ টি লেক রয়েছে। শীতকালে সবুজে মোড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব লেকে বসে পরিযায়ী পাখির মেলা। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত হরেক রকমের পাখির সমারোহে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসটি। খঞ্জনা, সরালি, পাতিতারা, পাতারিহাঁস, গয়ার, নোনাজোৎসা, লালমুড়ি, ধুপানি, সিন্ধু ঈগল, বামুনিয়া হাঁস, হুড হুড, বাড়িঘোরা ইত্যাদি পাখিগুলো কয়েক মাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা সৌন্দর্য দান করে। অতিথি পাখির কলতান, জলকেলী ও লেকের জলে ফোটা লাল শাপলার সৌন্দর্য এক অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সৌরভ বিলিয়ে যায় সমগ্র ক্যাম্পাস জুড়ে। ফলে শীতকালে ক্যাম্পাসটি পরিণত হয় পাখিপ্রেমীদের মিলনমেলায়। অক্টোবর মাসের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত এরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যা দেখতে পাবেন
১. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি আকারে বেশ বড়। মসজিদটি ২০০৫ সালে কুয়েত এর অর্থায়নে তৈরির কাজ শুরু করা হয়। কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এর কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালে।
২. শহিদ মিনার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার টি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শহীদ মিনার। প্রায় ৫২ ফুট ব্যাস ও ৭১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনারটি তৈরি করেন স্থপতি রবিউল হুসাইন। শহীদ মিনারটি ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনের ও ১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক।

৮টি সিঁড়ি ও ৩টি স্তম্ভ বিশিষ্ট শহীদ মিনারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সম্মুখে গোল চত্বরের মাঝে অবস্থিত। এই ৮টি সিঁড়ি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৮টি তাৎপর্যপূর্ণ বছর। বছর গুলো হল, ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ ও ১৯৭১ । আর, তিনটি স্তম্ভের একটি বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও অপর ২টি মাটি ও মানুষ এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে।
লাল ইটের বিশাল আকৃতির এই শহিদ মিনারটি প্রকৃতির বুকে যেন নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ দিচ্ছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে নীল আকাশের নীচে লাল নীল আভায় নতুন রূপ ধারণ করেছে মিনারটি । বাংলাদেশ আর কোথাও এমন উচ্চতার বিশাল শহিদ মিনার নেই। মিনারটি একদিকে যেমন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মূর্ত প্রতীক তেমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ধারকও বটে। ইতহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী এই মিনারটি দেশের মানুষকে ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে অনুপ্রাণিত করছে।
৩. সংসপ্তক

জাবি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য সংশপ্তক। এই ভাস্কর্যটি মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে এক পা ও এক হাত হারিয়েও এক সংশপ্তক মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ের হাতিয়ার উর্ধে তুলে ধরেছে। স্থপতি হামিদুজ্জামান খান ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ এটি নির্মাণ করেন। মাটি থেকে ভাস্কর্যটির ঊচ্চতা হল ১৫ ফুট। মূল ভাস্কর্যটি ব্রোঞ্জ ধাতুতে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, এটি নির্মানে লাল সিরামিক ইট ব্যবহার করা হয়েছে।
জাবি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য সংশপ্তক। এই ভাস্কর্যটি মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ের প্রতিচ্ছবি হিসেবে এক পা ও এক হাত হারিয়েও এক সংশপ্তক মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ের হাতিয়ার উর্ধে তুলে ধরেছে। স্থপতি হামিদুজ্জামান খান ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ এটি নির্মাণ করেন। মাটি থেকে ভাস্কর্যটির ঊচ্চতা হল ১৫ ফুট। মূল ভাস্কর্যটি ব্রোঞ্জ ধাতুতে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, এটি নির্মানে লাল সিরামিক ইট ব্যবহার করা হয়েছে।
৪. অমর একুশে

অমর একুশ ভাস্কর্যটি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিপূর্ণমূলক ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত। এর স্থপতি শিল্পী জাহানারা পারভীন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ২ নং গেইট এর সামনে অবস্থিত এই ভাস্কর্যটি। ভাস্কর্যটির স্তম্ভসহ ফিগারের মোট উচ্চতা ৩৪ ফুট। এটি নির্মাণ করা হয়েছে চুনাপাথর, সিমেন্ট, ব্ল্যাক আইড, বালি, মডেলিং ক্লে প্রভৃতি দিয়ে।
অমর একুশ মনে করিয়ে দেয় ত্যাগ আর অগণিত প্রাণের বিনিময়ে বাঙালির প্রাপ্তি। বিশ্বে বাঙালিরা একমাত্র জাতি যাদের ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে। ‘অমর একুশ’ নিয়ে যায় ৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারিতে যেই দিনে-ভাষার জন্য ছাত্ররা মিছিল করেছিল। পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর, জব্বার প্রমুখের তাজা প্রাণের লাল রক্তে বাঙালিরা নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন করে। ‘অমর একুশ’ মা-বাবার কোলে সন্তানের লাশকে দেখায়। মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে কংক্রীটের শরীরে জীবন্ত করেছেন শিল্পী জাহানারা পারভীন। শিল্পী ‘অমর একুশ’ ভাস্কর্য কর্মে তার লালিত স্বপ্ন এবং জাতীয় চেতনাকে স্থায়ীরূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ‘অমর একুশ’ নামের মধ্যে বায়ান্নের সেই উত্তাল সময়কে যেমন ধরে রাখা হয়েছে তেমনি একটি শাণিত চেতনাকেও শরীরী করা হয়েছে। এই ভাস্কর্যে একজন মায়ের কোলে শায়িত ছেলের পথিকৃৎ দেখা যায় এবং এর পেছনে শ্লোগানরত অবস্থায় একজনের প্রতিকৃতি দেওয়া হয়েছে।
৫. পদ্মবিল

৬. মুক্তমঞ্চ বা সেলিম-আল দীন মুক্তমঞ্চ

১৯৮১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন জায়গায় মুক্তমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি নাট্যাচার্য সেলিম-আল দীনের নামে এর নামকরণ করা হয় ‘সেলিম-আল দীন’ মুক্তমঞ্চ।
কিভাবে যাবেন
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব মাত্র ৩২ কিলোমিটার। রাজধানী ঢাকার কল্যাণপুর, গুলিস্তান, ফার্মগেইট এবং গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে নবীনগর অথবা মানিকগঞ্জগামী যেকোন বাসে চড়ে সরাসরি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে আসতে পারবেন। এসব বাসে উঠে ডেইরি গেটে নামলে পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দেখা যাবে।