কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম বদ্বীপ বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জেলা। পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক বালুময় ১২০ কিলোমিটার বিস্তৃত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের জন্য সারা বিশ্বের কাছে সমাদৃত। এই জেলার আয়তন ২,৪৯১.৮৬ বর্গ কিলোমিটার। কক্সবাজার জেলার উত্তরে চট্টগ্রাম, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বান্দরবন ও মায়ানমার, পশ্চিমে বিস্তৃত বঙ্গোপসাগর। কক্সবাজার শহরে বিভিন্ন ধর্ম ও উপজাতি গোষ্ঠীর আবাস্থল। এই একটি জেলার মধ্যে বন, পাহাড়, নদী, সমুদ্রের প্রাকৃতিক মিলনের অপরূপ সাম্রাজ্য দেখেতে পাওয়া যায়। কক্সবাজার জেলার বুকচিরে গিয়েছে অনেক নদী আর তার মধ্যে প্রধান কিছু নদী হল নাফ নদী, মাতামুহুরি, রেজু খাল, বাকখালী, প্রভৃতি। দর্শনীয় দ্বীপ গুলো হচ্ছে সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, মহেশখালী, শাহপরী, মাতাবাড়ি দ্বীপ। একথায় বলা যায়, কক্সবাজার জেলাটি পর্যাটক শিল্পের এক বড় সৌন্দর্যের সমাহার।
১. মেধা কচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাবার পথে চকরিয়া মহাসড়ক সংলগ্ন মেধা কচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের অবস্থান। ২০০৪ সালে জাতীয় সংরক্ষিত বন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। মেধা কচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানটির আয়তন ৩৯৫.৯২ হেক্টর। বনটি গর্জন গাছের জন্য সুপরিচিত হলেও কিন্তু বনে শাল, সেগুন, চাপালিশ, তেলসুর, ঢাকিজাম ও ভাদি গাছও আছে। উদ্যানের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ৩৫২৫টি পরিবার বসবাস করে। উদ্যানের স্থানীয়রা কৃষিকাজ, লবন চাষ আর মৎস্য চাষের উপর নির্ভরশীল। বনে হাতি, বানর আর নানা প্রজাতির পাখির আবাস্থল। মাঝে মাঝে কিছু হাতি লোকালয়ে চলে আসে। বসন্ত কালে গর্জন ফুল ফুটে মাটিতে পরে ফুলের গালিচা বানিয়ে দেয় আর চারদিকে ফুলের সুবার পর্যাটকদের সুবাসিত করে তোলে। ক্রান্তীয় চিরহরিৎ প্রাকৃতিক বনটিকে রক্ষার জন্য সরকারী ভাবে কিছু কৃত্রিম বনায়ন ও নিয়মিত বন পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
২. ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক বা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বাংলাদেশের সর্ব প্রথম সাফারি পার্ক। ১৯৯৯ সালে ২০০০ একর জায়গা জুড়ে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় পার্কটি মূলত হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। উন্মুক্ত পরিবেশে আটটি ভাগে ভাগ করা ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক। পার্কের গেট থেকে ধুকতেই বামদিকে আছে একটি যাদুঘর আর ডান দিকে আছে অর্কিড ফুলের বাগান। এখানে সিংহ, বাঘ, হাতি, ভাল্লুক, কুমির, গয়াল, জলহস্তী, চিত্রা হরিণ, সম্বল হরিণ, মায়া হরিণ, প্যারা হরিণ, বানর আর অদিকাংশ পাখিদের বিচরন এই পার্কে, প্রায় ১৬৫ প্রজাতির ৪০০০টি প্রাণীদের নিরাপদে পর্যবেক্ষণ করা যায়। পার্কে দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য পালিত হাতি আর ঘোড়ার ব্যবস্থা আছে। পার্কের সুবিস্তৃত গাছ উপর থেকে উপভোগ করার জন্য একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। পর্যাটকদের জন্য আছে বিশ্রামাগার। পার্কের ভ্রমণ সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
৩. কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজার সদরের নিকটতম সমুদ্র সৈকত হচ্ছে লাবনী পয়েন্ট আর কলাতলী বীচ। কক্সবাজার শহর থেকে পায়ে হেঁটে, রিকশায় বা অটোরিকশা করেই যাওয়া যায় সমুদ্র সৈকতে। রাস্তা থেকে নেমেই বালুকাময় সমুদ্র সৈকতের পর্যন্ত যাওয়ার মাঝেই দুপাশে দেখা যায় অনেক গুলো পর্যাটক আকর্ষিত করার মত অনেক দোকান আর খাবারের হোটেল। ঐ দোকান গুলোতে পাওয়া যায় শামুক, ঝিনুক সহ সীমান্ত পথে মায়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে আসা বাহারি জিনিস। হোটেল গুলোতে সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া সহ খাবারের অনেক কিছু সাজিয়ে রাখা থাকা যেখান থেকে পর্যাটকেরা দেখে পছন্দ করে তাদের ফরমাশ পূরণ করতে পারেন। লাবনী পয়েন্ট থেকে ১৫ পায়ে হেঁটে গেলেই পরে কলাতলী বীচ। সমুদ্র পাড়ে লাইন দিয়ে সাজিয়ে রাখা আছে অনেক ছাতা সহ ইজি চেয়ার। সমুদ্রের পাড় থেকে দেখা যায় অনেক জাহাজ আর জেলেদের মাছ ধরার নৌকা। বিকালে দেখাযায় সমুদ্রের সাথে মিশা যাওয়া সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। তাছাড়াও সমুদ্রের বালুকাময় লবণাক্ত পানি উপভোগের পাশাপাশি ঘোড়ায় চড়া, বীচ ফটোগ্রাফি, বীচ বাইক, স্পিডবোট, প্যারাসেইলিং এর মজা নিতে পারেন। কলাতলী বীচের সমুদ্র পাড় ধরেই গড়ে উঠেছে অনেক রেস্তোরাঁ, যেখানে বসে পর্যাটকেরা খাবারের সাথে সাথে সমুদ্র আর সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। পর্যাটকেরা ভ্রমণ শুরু করার পূর্বে তাদের হোটেল থেকে সমুদ্রের জোয়ার ভাটার সময়সূচী জেনে সমুদ্র সৈকত উপভোগ করতে পারেন।
৪. রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড

কক্সবাজার সদরের ঝাউতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের অ্যাকুরিয়াম “রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড”। কক্সবাজার সদর থেকে রিজার্ভ বা লোকাল ভাবে সিএনজি, অটোরিকশা বা রিকশা নিয়ে যাওয়া যায়। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয় এই রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড। এর অভ্যন্তরীণ অংশকে অ্যাকুরিয়াম ছাড়াও আরও ৮টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে থ্রি-নাইন ডি মুভি হল, নানা প্রজাতির দেশী বিদেশী পাখির ঘর, ছবি তোলার ডিজিটাল কালার ল্যাব, সুপার শপ, লাইভ ফিস রেস্টুরেন্ট, প্রাথনা ঘর, শিশুদের খেলার স্থান, বিভিন্ন ধরন এর অনুষ্ঠানের জন্য আছে কনফারেন্স হল, ছাদে আছে বার-বি কিউ উপভোগ করার ব্যবস্থা এছাড়াও আছে পার্কিং ও লাগেজ রাখার লকার এর সুব্যবস্থা। এখানে এক একটি ভাগের প্রবেশ মূল্য এক এক রকম এবং বয়স ভেদেও টিকিট মূল্য নির্ধারণ করা হয়। মাঝে মাঝে নানা সময় ও উপলক্ষে টিকিটে মূল্যছাড় থাকে। রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডের অ্যাকুরিয়ামে আন্তর্জাতিক মানের বঙ্গোপসাগরের লোনা পানি, মিঠা পানির, দেশী, বিদেশী, বিলুপ্ত প্রায় অনেক প্রজাতির মাছ আছে। এখান থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পানির নিচের জীব বিচিত্রময় জীবন সম্পর্কে অনেক গ্যান অর্জন করতে পারবে। রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডে পরিদর্শন সময় সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
মহাসিংদোগ্রী বৌদ্ধ মন্দির
কক্সবাজার সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রিকশা বা অটোরিকশায় করে বৌদ্ধ মন্দির সড়কের মোড় ঘেঁষে মহাসিংদোগ্রী বৌদ্ধ মন্দিরে যাওয়া যায়। ২০০ বছর পুরাতন মন্দিরে ধুকতেই দেখা যায় অনেক পুরাতন বিশ্রামাগার, চলাচলের জন্য ছোট রাস্তা আর তার দুপাশে রকমারি নানা ফুল আর ফলের গাছ। মন্দিরে ঢুকতেই ডান দিকে চোখে পরে প্রায় ২৫০ বছর পুরাতন শীল কড়ই গাছ। এই মন্দিরটি প্রায় ২০০ বছর পূর্বে একজন রাখাইন মহিলা সেগুন ও লৌহকাঠ দিয়ে কারুকার্য খচিত শক্ত ও মজবুত স্থাপনায় প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের দ্বিতীয় তলায় কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই দেখা যায় ছোট বড় অনেক মূর্তি, পুজার সামগ্রী, মোম, আগরবাতি, ফুল, আরও অনেক কিছু। মন্দিরের ডানে আছে রান্না ঘর, আর বামে আছে তীর্থযাত্রীদের ভবন। মন্দিরে পর্যাটকদের পরিদর্শন সময় সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
৫. বার্মিজ মার্কেট

কক্সবাজার সদর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে এই বার্মিজ মার্কেট। কক্সবাজার পর্যাটকদের বার্মিজ মার্কেট গুলোয় বেশ আকর্ষণ থাকে। বার্মিজ মার্কেটে শামুক, ঝিনুক ছাড়াও আছে রাখাইনদের ঐতিহ্যগত হস্তচালিত তাঁতে বোনা পণ্য আর মায়ানমার, ভারত, থাইল্যান্ড, চীন এর অনেক পণ্য। মার্কেট স্টোর গুলোতে পাওয়া হায় রাখাইনদের হস্তশিল্পের লুঙ্গি, থামি, ব্লাউস, চাদর, শাল, ফতুয়া, ব্যাগ, পাখা, চন্দন, স্যান্ডেল, আচার, বাদাম, শুকনো ফল, বাম জাতীয় ভেষজ, শুঁটকি, কাঠের-ঝিনুকের তৈরি সৌখিন জিনিস, কাঠের ফ্রেম, বক্স, কানের দুল, চুড়ি, চকলেট, ইত্যাদি। সময়ের সাথে সাথে এই মার্কেটে বাড়ছে পর্যাটকদের আকর্ষিত করার মত অনেক পণ্য। অনেকে ধারণা করেন যে এই মার্কেটে বার্মিজ পণ্য এর সাথে মার্কেটের দোকানীরাও বার্মিজ। আসলে তা নয়, মার্কেটে কিছু বার্মিজ পণ্য পাওয়া গেলেও দোকানীরা মূলত রাখাইন উপজাতি গোষ্ঠী। এছাড়াও লাবনী পয়েন্টে এবং সুগন্ধা পয়েন্টে বার্মিজ মার্কেট আছে।
৬. দারিয়ানগর পর্যাটক কেন্দ্র
কক্সবাজার সদর থেকে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে ৮ কিলোমিটার হিমছড়ি যাবার আগেই বড়ছেড়া গ্রামে ৩৭ একর জমিতে পাঁচ পাহাড়ের সমন্নয়ে গড়ে উঠেছে দারিয়া নগর পর্যাটন কেন্দ্র। কক্সবাজার সদর থেকে অটোরিকশা, সিএনজি, বা লোকাল বাসে করে যাওয়া যায় দরিয়া নগরে। পর্যাটক বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশ মুখে প্রথমে দেখা মিলে মুখ খুলে রাখা একটি নীল রঙের হাঙ্গর। হাঙ্গরের মুখ দিয়ে ধুকেই সামনে পরবে সিঁড়ি, সেই সিঁড়ি দিয়ে পাহাড়ের সমতল ভুমিতে পর্যাটকদের জন্য আছে বসার জায়গা, আছে একটি বাংলো, আর রকমারি ফুলের গাছ। একটু হাঁটলেই দেখা যায় এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার জন্য বাঁশের তৈরি সাঁকো। পর্যাটকদের জন্য দরিয়া নগর পাহাড়ের চূড়া থেকে পাশের পাহাড় গুলোর, নিচে সমুদ্র আর স্থল ভাগের প্রাকৃতিক দৃশ্য বসে উপভোগ করার জন্য আছে ছনের তৈরি ছায়া যুক্ত বসার জায়গা। পাহাড়ের চুড়া থেকে প্রায় ৭০০ ফুট গভীরে আছে অতি প্রচীন একটি গুহা, গুহার ভিতরে দুটি পাহাড়ের পাথর ছুঁয়ে পরছে শীতল পানির পাহাড়ি ঝর্নার ঝিরি। গুহাটির নাম শাহিনশার গুহা। পাহাড়ের নিচেই আছে দারিয়া নগর পার্ক। এবং রাত্রি যাপন করার জন্য আছে কটেজ। খাবারের সুবিধার জন্য আছে একটি রেস্তোরাঁ। এছাড়াও সমুদ্র আর পাহাড়ের মিলনস্থল দরিয়া নগরে পর্যাটকদের বড় আকর্ষণ হচ্ছে প্যারাসেইলিং।
৭. চৌফলদন্ডী – খুরুশকুল সংযোগ সেতু
বাকখালী নদী কক্সবাজারকে ঘিরে রেখেছে অদ্ভুত সুন্দরভাবে। কক্সবাজার ঘুরাঘুরি করার সময় বেশ কয়েকবার কয়েক রূপে নদীটা চোখে পড়বে। তবে, নদীটা সবচেয়ে সুন্দর রূপ ধারণ করেছে খুরুশকুল আর চৌফলদন্ডী এর মাঝে এসে। কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে যখন এই জায়গায় আসবেন, মনে হবে অন্য একটা জগতে চলে এসেছেন। সমুদ্রের শহরে বলে এমন সুন্দর নদীটাকে অবহেলা করার মতো না!
কক্সবাজার সদরের উত্তরে ৮ কিলোমিটার দূরে চৌফলদন্ডী ইউনিয়নে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইছাঁখালী নদীর উপর নির্মিত হয় সেতুটি। কক্সবাজার সদর থেকে রিকাশা, অটোরিকশা, সিএনজি, বাসে করে প্রায় ২০ মিনিটে পৌঁছানো যায় সেতুতে। সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে রাস্তার দুদিক থেকে নানা ধরনের যানবাহন আর সেতুর নিচে নৌকা, ট্রলারের ব্যস্ততা দেখা যায়। পর্যাটকদের সেতুর নিচে স্থলভূমিতে, আর নদীতে নৌকা বা ট্রলারে করে চৌফলদন্ডী আর খুরুশকূল এই দুই ইউনিয়নের মাঝে বুকচীরে চলে যাওয়া ইছাঁখালী নদী এর প্রাকৃতিক আর কর্ম ব্যস্ততার জীবনের দৃশ্য দেখা মিলে।
যেভাবে যাবেন
কক্সবাজার এর যেকোন জায়গা থেকে “খুরুশকুল রাস্তার মাথা আসবেন”। সেখান থেকে লোকাল/রিজার্ভ সিএনজি বা অটোতে করে চৌফলদন্ডী ব্রীজে চলে আসবেন।
খরচ
কক্সবাজার এর যেকোনো জায়গা থেকে- খুরুশকুল রাস্তার মাথা জনপ্রতি ১০-২০ টাকা।
সেখান থেকে চৌফলদন্ডী লোকাল সিএনজি ৩০ টাকা করে। মোট খরচ ১০০ টাকা জনপ্রতি।
৮. হিমছড়ি
কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত হিমছড়ি। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি যাওয়ার পথে বামদিকে সবুজঘেরা পাহাড় আর ডানদিকে সমুদ্রের নীল জলরাশির মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের দর্শন হয়। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হিমছড়ি জলপ্রপাত। কক্সবাজারের স্থানীয়দের চিংড়ি হ্যাচারীর পথ ফেলে বেশ উঁচু একটা ব্রীজ পার হলে শুরু হবে হিমছড়ির স্থানীয়দের রাস্তা, এই রাস্তা নাকি তৈরি করে সেনাবাহিনীর। বর্ষার মৌসুমে হিমছড়ির ঝর্না গুলোকে অনেক বেশি জীবন্ত ও প্রাণবন্ত হয়ে যায়। এখানের প্রধান আকর্ষণ এখানকার ক্রিস্টমাস ট্রি। হিমছড়ি উদ্যানটি প্রায় চিরসবুজ ক্রান্তীয় বৃক্ষের বনাঞ্চল। হিমছড়ি বনের ১১৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৬ প্রজাতির উভয়চর, ২৮৬ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এই বনাঞ্চলে মায়া হরিণ, বন্য শুকর, বানর ও ভাল্লুকের আবাস্থল। পাহাড়ে ঝোপঝাড়ের সাথে সাথেও নানা ধরণের গাছও দেখতে পাওয়া যায়। হিমছড়ি পাহাড়ের চূড়ায় রিসোর্ট আছে যেখানে থেকে সমুদ্রের দৃশ্য পার্থিব মনে হয়। পাহাড়ের উপর থেকে পর্যটকদের জন্য সূর্যাস্ত উপভোগ করার, এবং উপর থেকে চারপাশের প্রকৃতি আকাশ থেকে সমুদ্রে ও স্থল ভুমিতে মিলে যাওয়ার মনোমুগ্ধকর অপরূপ দৃশ্য দেখার ব্যাবস্থা করা আছে। আরও দেখতে পাবেন বালির উপরে সারি সারি করে বেঁধে রাখা জেলেদের নৌকা আরো দেখতে পাবেন ঝাউবনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে সরু পথ। পাহাড়ের পাদদেশে আছে বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র, পিকনিক স্পট, ইকো পার্ক ও বার্মিজ মার্কেট। হিমছড়ি প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটকদের এক অনন্য আকর্ষণ। এখানে পর্যাটকদের সমুদ্রের সৈকতে ড্রাইভ করার সুবিধা আছে।
৯. ইনানী বীচ
কক্সবাজার সদর ছেড়ে মেরিন ড্রিইভ সড়ক ধরে শিলখালী সুউচ্চ গর্জন বনের ভেতর দিয়ে ৮ কিলোমিটার পথ গেলেই আসে এই নির্জন সৈকত। পশ্চিমে সমুদ্র আর পূর্বে পাহাড়ের অপূর্ব একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। এই সৈকতের তীর ঘেঁষে রয়েছে ছোট আর মাঝারি আকৃতির ঝাউগাছের জঙ্গল আর সমুদ্রের নীল জলরাশিতে সারি সারি পাথরের মেলা। সৈকতটি খুবই প্রশস্ত ও পাথরে ঘেরা, আর ঐ পাথরেরে ফাঁকে ফাঁকে জমানো সমুদ্র জলে ছোট ছোট লাল কাঁকড়া, মাছ, শামুক, ঝিনুক সহ আরও কত কি! খুব সকাল কিংবা বিকালে এ সৈকতে নামে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়াদের দল। একটু দূরে সমুদ্রের সৈকতজুড়ে রয়েছে নোঙ্গর ফেলে রাখা সারি সারি নৌকা। বিকালে সূর্যাস্তের প্রাক্বালে অন্তগামী সূর্যের ছায়া সমুদ্রের জলের সাথে মিলে মিশে সৃষ্টি হওয়া অপরূপ শোভার দৃশ্য পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভ্রমনে যারা নির্জনতা পছন্দ করেন তাদের জন্য আদর্শ জায়গা হচ্ছে ইনানী বীচ।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবার জন্য স্থল পথে ভ্রমণকারীদের পছন্দ মত এসি এবং নন এসি উভয় সুবিধা সম্পন্ন অনেক বাস রয়েছে। আকাশ পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যাবার জন্য বিমানের সুবিধাও রয়েছে। কিন্তু ঢাকা থেকে কক্সবাজার সরসরি যাবার জন্য রেল পথের কোন সুবিধা নেই। রেল পথে যেতে হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসে চট্টগ্রাম থেকে স্থল পথে বা আকাশ পথে যাওয়া যাবে কক্সবাজার সদরে।
কোথায় থাকবেন
কক্সবাজার সদরে বাংলাদেশ পর্যাটক কর্পোরেশনের লাবণী, শৈবাল, প্রবাল নামে মেটাল রয়েছে। তাছাড়াও পর্যাটকদের পছন্দ আর সাধ্য অনুসারে অনেক বেসরকারি হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। সেখানে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে রাত্রিযাপন করা যায়।
কোথায় খাবেন
কক্সবাজার সদর ঘুরতে ঘুরতে পর্যাটকেরা যে কোন জায়গায় তাদের পছন্দের খাবারের জন্য বিভিন্ন মানের অনেক খাবার রেস্তোরাঁ বা রেস্টুরেন্ট পাবেন।