রামসাগর দীঘি

0
29
Ramsagor historical pond
রামসাগর দিঘী

রামসাগর দীঘি দিনাজপুর জেলার তেজপুর গ্রামে মানুষের খনন করা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দিঘী। দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে রামসাগর দীঘি অবস্থিত। রামসাগর দীঘি কেন্দ্র করে একটি মনোরম রামসাগর জাতীয় উদ্যান গড়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এ দীঘির আয়তন প্রায় ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার এবং গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। দীঘির পশ্চিম পাড়ে একটি ঘাট ছিল যার অবশিষ্ট এখনও রয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, পলাশী যুদ্ধের কিছুকাল পূর্বে রাজা রামনাথ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর পানির চাহিদা পূরণের জন্য এই দীঘিটি খনন করান। রাজা রামনাথের নামেই এ দিঘীটির নামকরণ করা হয় রামসাগর দীঘি । চারপাশে সবুজ বৃক্ষময় এবং উচু টিলার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা রামসাগর দীঘির সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে।

রামসাগর দিঘী
রামসাগর দিঘী, দিনাজপুর

রামসাগরে যা দেখবেন

রামসাগর ঢুকে দিঘীর স্থির ও স্বচ্ছ জলরাশি আপনাকে মুগ্ধ করবে। মূল দিঘিকে চারপাশে জুড়েই রয়েছে প্রশস্ত পাকা রাস্তা। এ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে দিঘির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। রামসাগর জাতীয় উদ্যানের পাকা রাস্তার এক পাশে রামসাগর দিঘির নীল স্বচ্ছ টলমলে জলের হাতছানি আর এক পাশে উঁচু উঁচু টিলার নয়নাভিরাম সবুজের সমারোহ। টিলাজুড়ে নানা জাতের গাছগাছালি। গাছগুলোতে পাখিদের আড্ডা আর কলকাকলিতে রামসাগরে সব সময়ই উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। শীতকালে রামসাগর দিঘির জলে হাজার হাজার জলজ অতিথি পাখির খুনসুটিতে তৈরি হয় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।

রামসাগর জাতীয় উদ্যানে গড়ে তোলা হয়েছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। যেখানে অজগর, বানর এবং কিছু হরিণ সহ বিভিন্ন প্রাণী স্থান পেয়েছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে একটি আকর্ষনীয় শিশুপার্ক। পিকনিকের সুবিধা নিশ্চিত করতে রামসাগরে রয়েছে ৭ টি পিকনিক কর্নার। রামসাগর দিঘির শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশে সারা বছর অগণিত ক্লান্ত মানুষ ছুটে আসেন নাগরিক জীবনে কিছুটা বৈচিত্র্য আর প্রশান্তির আশায়। রামসাগর জাতীয় উদ্যানের যাওয়ার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও অত্যন্ত ভালো।

আরো পড়ুন: বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা

রামসাগর দীঘি কিভাবে যাবেন

১. বাসযোগে যেতে

ঢাকা থেকে বাস এবং ট্রেনে দিনাজপুর যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সাধারণত ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলো ছেড়ে যায়। ঢাকার কল্যাণপুর থেকে প্রতিদিনই দিনাজপুরের উদ্দেশে বাস যায়। তা ছাড়া বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে সহজেই চলে আসা যায় দিনাজপুরে। ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলি ছেড়ে যাওয়া বাস সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে নাবিল পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস ,এস এ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন ইত্যাদি। নন-এসি এবং এসি বাস ভাড়া মানভেদে ৬০০ থেকে ১,৩০০ টাকা।

২. ট্রেনযোগে যেতে

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রাত ৮ টায় ছেড়ে যায়। আন্তঃনগর ট্রেন একতা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে সকাল ১০ টায় ছাড়ে। আর পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় বেলা রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে। শ্রেনীভেদে এইসব ট্রেনের টিকেট কাটতে ৫৩৫ টাকা থেকে ১,৫৯৯ টাকা লাগে।

৩. দিনাজপুর থেকে রামসাগর যেতে

দিনাজপুর শহর থেকে অটোরিকশায় ৩০-৪০ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া যায় রামসাগর জাতীয় উদ্যানে বা রামসাগর দিঘী।

কোথায় থাকবেন

রামসাগরে অবস্থিত স্থানীয় বন বিভাগের বাংলোতে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারেন। এই বাংলোর সাধারণ কক্ষ এবং এসি কক্ষে প্রতি রাত থাকতে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ হবে।

পর্যটন মোটেল দিনাজপুর শহরে একটি ভাল মানের হোটেল। পর্যটন মোটেলে ১৫০০ থেকে ২২০০ টাকায় রাত্রি যাপন করতে পারবেন। কিংবা প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন দিনাজপুরের সাধারণ মানের হোটেলগুলিতে। সাধারণ মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল ডায়মন্ড, নিউ হোটেল, হোটেল রেহানা, হোটেল নবীন, ইত্যাদিতে ২০০ থেকে ১০০০ টাকায় রাত্রি যাপন করতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

দিনাজপুরে রুস্তম, দিলশাদ হোটেলে গরুর ভুনা মাংস, কাঠি কাবাব ইত্যাদি খেয়ে দেখতে পারেন। এছাড়া এ এসব হোটেলে ভাত, গরু কিংবা মুরগির মাংস, ডাল আর সবজি দিয়ে আহার সেরে নিতে পারেন।

দিনাজপুর জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

দিনাজপুরের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যমন্ডিত দিনাজপুর জেলা চাল, লিচু ও আম উৎপাদনের জন্যে বিখ্যাত। উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে রয়েছে। 

কোথায় থাকবেন

হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। একারণে কোন স্থানে ভ্রমণের পূর্বে বর্তমান ভাড়া ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিবেন। ওয়েবসাইটে যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রদত্ত নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্য চলো ঘুরি কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here