গদখালী: এক টুকরো ফুলের রাজ্য

0
37
গদখালী

বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী হিসাবে সুপরিচিত যশোর জেলার গদখালী নামক স্থানটি। যশোর জেলা শহর থেকে বেনাপোলের দিকে ১৮ কিলোমিটার এগুলেই গদখালী বাজার। গদখালীতে আসা ফুলগুলো যশোর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঝিকরগাছা ও শার্শা থানার ৯০ টি গ্রামের প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমিতে চাষ করা হয়। ঝিকরগাছা ও শার্শা থানার গ্রামগুলোর রাস্তার দুইপাশে দিগন্তবিস্তৃত জমিতে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকতে হয়। এছাড়া ফুলের সুগ্রান, মৌমাছির গুঞ্জন, আর রঙিন প্রজাপতির ডানায় ভর করে এখানে আসে চিরন্তন সুন্দরের বার্তা। রজনীগন্ধা, গোলাপ, গ্লাডিওল্যাস আর গাঁদা ফুল চাষ হয় এসব গ্রামে। সেখান থেকে ফুল সংগ্রহ করে গরুর গাড়িতে গদখালী বাজারে নিয়ে আসা হয়। গদখালী থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায় ফুলের রাজধানীর সৌরভ। প্রায় সারা বছরই বাহারি ফুলের সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে। গদখালি বাজার থেকে সকালেই ভ্যানে চড়ে চলে যাবেন ফুলের রাজ্যে। ভ্যান যতো সামনে এগোবে, চারপাশের জায়গাগুলো সবুজের পরিবর্তে লাল, নীল, হলুদ কিংবা সাদা হয়ে উঠবে! চোখ আটকাবে দু’ধারে। দেখলেই মনে হবে, হরেক রকমের রঙিন চাদর বিছিয়ে রেখেছে দিগন্তজুড়ে।

গোলাপ ফুল, গদখালী
গোলাপ ফুল, গদখালী

গদখালী ফুলের বাজার

ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের পানিসারা, হাড়িয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া, মাটিকুমড়া, বাইসা, কাউরা ও ফুলিয়া গ্রামের প্রতিটি মাঠের চিত্রই এমন। শত শত বিঘা জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজি জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ। মনে হবে সুন্দর বাংলাদেশের বুকে এক টুকরো স্বর্গ। ফুলের তীব্র সুগন্ধ, অসংখ্য মৌমাছি-প্রজাপতিদের উড়ে যাওয়া দৃশ্য মন কেড়ে নিবে। যে কোনো বাগানে ঢুকে ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়ান, ছবি তুলুন, পছন্দমতো কয়েকটা ফুল তুলুন; কেউ কিছু বলবে না। বরং আপনার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিবে। তবে ফুলের বাগানে ঢোকার আগে অবশ্যই চাষিদের অনুমতি নিবেন।

আরো পড়ুন: করমজল পর্যটন কেন্দ্র

গদখালী যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় জানুয়ারি মাস। ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যশোর যাওয়া যায়। যশোর বাস স্ট্যান্ড থেকে রিক্সা নিয়ে চলে যান লোকাল বাস স্ট্যান্ডে। এখান থেকেই পেয়ে যাবেন গদখালি যাবার বাস। গদখালি নেমে ক্ষেত দেখার জন্য ভ্যান নিয়ে নিতে পারেন। ভ্যান ভাড়া নিবে ১০০-১৫০ টাকা। গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাবার সময় রাস্তার দুপাশে চোখে পড়বে ফুলের ক্ষেত। বাসস্ট্যান্ডের রাস্তার পাশেই সকালে বসে দেশের সর্ববৃহৎ ফুলের পাইকারি বাজার। থাকার জন্য যশোর শহরকেই বেছে নিতে হবে। সেখানে থাকা এবং খাবারের জন্য হোটেল পেয়ে যাবেন। আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল আমিন এবং হোটেল মিডটাউন উল্লেখযোগ্য।

কিভাবে যাবেন

১. ঢাকা থেকে যশোর বাসযোগে

রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক, রেল এবং আকাশপথে যশোর যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী এবং কলাবাগান থেকে সোহাগ, হানিফ, এসপি গোল্ডেন লাইন, এম.আর এন্টারপ্রাইজ, দেশ ট্র্যাভেলস, একে ট্র্যাভেলস, গ্রিন লাইন, শ্যামলী ও ঈগল পরিবহণের বেশকিছু এসি/নন-এসি বাস চলাচল করে। মানভেদে যশোরগামী নন-এসি বাসে ভাড়া ৪৮০ থেকে ৭০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৭৫০ থেকে ২০০০ টাকা।

২. ঢাকা থেকে যশোর ট্রেনযোগে

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে বুধবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য ৬ দিন সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন যশোর অভিমুখে যাত্রা করে এবং চিত্রা এক্সপ্রেস নামে অন্য একটি আন্তঃনগর ট্রেন সোমবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন সন্ধ্যা ৭ টা ও বেনাপোল এক্সপ্রেস বুধবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন রাত ১১ঃ১৫ মিনিট এ যশোরের জন্য যাত্রা করে। শ্রেণিভেদে ট্রেনের টিকেটের মূল্য ৪৫৫-১৬২০ টাকা।

৩. ঢাকা থেকে যশোর বিমানযোগে

এছাড়া ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ডোমেস্টিক টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এবং নভোএয়ার নিয়মিত ভাবে ঢাকা-যশোর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে।

৪. যশোর থেকে গদখালি

গদখালী ফুলের রাজ্যে যেতে হলে যশোর বাস স্ট্যান্ড কিংবা যশোর শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে রিক্সা ভাড়া নিয়ে লোকাল বাস স্ট্যান্ডে আসতে হবে। লোকাল বাস স্ট্যান্ডে থেকে গদখালি যাবার বাস পাওয়া যায়। গদখালি পৌঁছে ফুলের চাষের জমি দেখার জন্য ভ্যান নেয়া যাতে পাড়ে। দরদাম করে এক ঘন্টার জন্য ভ্যান ভাড়া নিতে ১০০-১৫০ টাকা লাগতে পাড়ে।

কোথায় থাকবেন

গদখালী ফুলের রাজ্যে বেড়াতে হলে রাতে থাকার জন্য যশোর শহরই উত্তম। ঝিকরগাছায় জেলা পরিষদের ২ টি ডাকবাংলো রয়েছে। যশোর শহরে থাকার হোটেল গুলোর মধ্যে উন্নতমানের হোটেল গুলোর মধ্যে আছে হোটেল সিটি প্লাজা ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল, জাবির ইন্টারন্যাশনাল হোটেল, হোটেল আর.এস ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল শামস ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি। এছাড়া যশোরে বেশকিছু সরকারি রেস্ট হাউস এবং মোটামুটি মানের আরও বেশ কিছু হোটেল আছে।

কোথায় খাবেন

যশোর বিখ্যাত মূলত জামতলার মিষ্টি, খেজুরের গুড়ের প্যারা সন্দেশ ও ভিজা পিঠার জন্য। এছাড়া ধর্মতলার মালাই চা এবং চুক নগরের বিখ্যাত চুই ঝাল খাবার প্রভৃতি পাবেন।

যশোর জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান

বিশেষ সতর্কতা

হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। একারণে কোন স্থানে ভ্রমণের পূর্বে বর্তমান ভাড়া ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিবেন। ওয়েবসাইটে যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রদত্ত নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্য চলো ঘুরি কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here