গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরে টুঙ্গীপাড়া গ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাদপুরুষ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধটি অবস্থিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন-সংগ্রামময় বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান ঘটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর মা-বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।

১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ মার্চ সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ এই সমাধিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০১ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকন্যা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সমাধিসৌধের উদ্বোধন করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাইগার নদীর পাড়ে প্রায় ৩৯ একর জমির উপর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ নির্মাণ করে।
গ্রিক স্থাপত্য শিল্পরীতির ছোঁয়ায় লাল সিরামিকের ইট এবং সাদা-কালো টাইলস যেন হয়ে উঠেছ বেদনার প্রতীক। কমপ্লেক্সের সামনের উদ্যান পেরিয়ে গেলেই বঙ্গবন্ধুর কবর চোখে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর কবরের পাশেই রয়েছে তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মা সায়েরা খাতুনের কবর। আর এই তিন কবরকে ঘিরেই মূল টম্ব নির্মাণ করা হয়েছে।
সমাধিসৌধের উপরে সাদা পাথরের তৈরী গোলাকার একটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজের দেয়াল জাফরি কাটা, আর এই জাফরি কাটা অংশ দিয়েই সমাধিস্থলে সূর্যের আলো প্রবেশ করে কাচের কারুকাজের মধ্য দিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে মসজিদ, পাঠাগার, পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, গবেষণাকেন্দ্র, প্রদর্শনী কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, বকুলতলা চত্বর, উন্মুক্ত মঞ্চ, স্যুভেনির কর্নার, ফুলের বাগান এবং কৃত্রিম পাহাড়।
কিভাবে যাবেন: রাজধানী ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টুঙ্গিপাড়া যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে বাস যোগে টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার দুইটি রুট রয়েছে। গাবতলী থেকে পাটুরিয়া হয়ে টুঙ্গিপাড়ার দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার। আর গুলিস্তান থেকে মাওয়া ঘাট হয়ে টুঙ্গিপাড়ার দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। গাবতলী রুটে চলাচলকারী গোল্ডেন লাইন, কমফোর্ট লাইন, সেবা গ্রিন লাইন বাসের জনপ্রতি সীটের ভাড়া ৫০০ টাকা। গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী সেবা গ্রিস লাইন, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ও মধুমতী পরিবহনের বাসে প্রতিজন ৪৭০-৬০০ টাকা ভাড়ায় টুঙ্গিপাড়া যাওয়া যায়।
গোপালগঞ্জ থেকে টুঙ্গিপাড়া : গোপালগঞ্জ শহরের বেদগ্রাম এবং পুলিশ লাইন মোড় থেকে ৩০ মিনিট বিরতিতে লোকাল বাস টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাসের ভাড়া লাগে ৪০ টাকা। গোপালগঞ্জ সদর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধে যেতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ভাড়া লাগে।
কোথায় থাকবেন
গোপালগঞ্জ জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকার জন্য হোটেল পলাশ, হোটেল রিফাত এবং হোটেল শিমুল নামে বেশ কয়েকটি সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। ধরণ এবং মান অনুযায়ী এসব হোটেলে রুম ভাড়া ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
গোপালগঞ্জ জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান
- কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বাড়ি
- লাল শাপলার বিল
- শেখ রাসেল শিশু পার্ক
- মধুমতি হাওড়
- গোপালগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন ইত্যাদি।
বিশেষ সতর্কতা
হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। একারণে কোন স্থানে ভ্রমণের পূর্বে বর্তমান ভাড়া ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিবেন। ওয়েবসাইটে যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রদত্ত নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্য চলো ঘুরি কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।