নড়াইল সদর উপজেলার দর্শনীয় স্থান

0
2
চিত্রা-রিসোর্ট
চিত্রা-রিসোর্ট

নড়াইল সদর উপজেলা বাংলাদেশের নড়াইল জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। নড়াইল সদর উপজেলার অবস্থান ৮৯.৩১ দ্রাঘিমা এবং ২৩.১১ অক্ষাংশ। নড়াইল সদর উপজেলার উত্তরে-মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলা ও শালিখা উপজেলা, পূর্বে- নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলা দক্ষিণ-পূর্বে- কালিয়া উপজেলা, দক্ষিণে-যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলা দক্ষিণ-পশ্চিমে- যশোর সদর উপজেলা ও পশ্চিমে-বাঘারপাড়া উপজেলা।

১। সুলতান কমপ্লেক্স

সুলতান কমপ্লেক্সে বিশ্বেবরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের স্মৃতি বিজড়িত সংগ্রহশালাকে কেন নতুন করে গড়ে উঠেছে। চিত্রা নদীর পাড়ে নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া এলাকায় মনোরম পরিবেশে এই কমপ্লেক্সের অবস্থান। প্রায় ২৭ একর এলাকায় গড়ে উঠা কমপ্লেক্সে দুর্লভ নানা প্রজাতির গাছের সমারহ। পাখিডাকা নদী আর সবুজের মাঝে চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানকে সমাহিত করে রাখা হয়েছে । সমাধি সৌধের সামনেই রয়েছে সুলতানের আদি বাসস্থানের খানিক অংশ । এর পিছনে দ্বিতল আধুনিক ফটোগ্যালারিতে সুলতানের চিত্রকর্ম ও ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলি সংরক্ষণ করে রাখা আছে। সুলতানের দুর্লভ সব চিত্র কর্মগুলি দেখার জন্য প্রতিদিনই গ্যালারি খোলা থাকে। লাল সিরামিকে মোড়া এই কমপ্লেক্স শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ আর অপূর্ব সব চিত্রকর্ম সুলতান কমপ্লেক্সের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন। সুলতান শিশুদের ছবি আঁকানো শিখানোর জন্য নদীতে তৈরী করেছিলেন বজরা ‘‘শিশু স্বর্গ‘‘ । শিল্পীর তৈরী সেই শিশুস্বর্গটি কমপ্লেক্সের পাশেই চিত্রানদীর ধারে সংরক্ষণ করা হয়েছে । এই কমপ্লেক্সটির সংলগ্ন এলাকাতে শিল্পীর দেয়া নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শিশুস্বর্গ – যেখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখানো হয় ।

নড়াইলের গৌরব বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস,এম,সুলতানের স্মৃতি গণমানুষের কাছে চির ভাস্বর এবং আগামী প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার মানসে সুলতান কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে ।

ভ্রমণের সময় সূচী:

সরকারী ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন ৯.০০টা হতে বিকাল-৫.০০ টা পর্যন্ত এই কমপ্লেক্স খোলা থাকে।

কিভাবে যাওয়া যায়:

ঢাকা থেকে সড়ক পথে আরিচা ফেরী পার হয়ে নড়াইল সদর ।

২। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ কমপ্লেক্স

জাতীয় শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এর স্মৃতি গণমানুষের কাছে চির ভাস্বর করে রাখার মানসে এবং মহান এই বীর সৈনিকের দেশ প্রেম, বীরত্বগাথা, অজানা কাহিনী গবেষনার মাধ্যমে জানা ও পরবর্তী প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার প্রয়াসে বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ কমপ্লেক্স করা হয়েছে।

স্বাধীনতা যুদ্ধে অপরিসীম বীরত্ব, সাহসিকতা ও দেশ প্রেমের জন্য বাংলাদেশ সরকার শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখকে রাষ্ট্রীয়ভাবে  বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করেন। এই খানে তাঁর সুমহান স্মৃতি রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার একটি ট্রাস্ট, গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর করেছেন। এ ছাড়াও তাঁর নামে এখানে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মহাবিদ্যালয় রয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বীরশ্রেষ্ঠের নামে তাঁর গ্রামটি নূর মোহাম্মদনগর নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ভ্রমণের সময় সূচী:

সরকারী ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন ৯.০০টা হতে বিকাল-৫.০০ টা পর্যন্ত খোলা। 

কিভাবে যাওয়া যায়:

ঢাকা থেকে সড়ক পথে আরিচা ফেরী পার হয়ে কালনা ফেরি ঘাট হয়ে নড়াইল সদর আসতে চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদনগর। ঢাকা থেকে সড়ক পথে দুরত্ব ৩১০ কিঃমিঃ সময়-৫/৬ ঘন্টা।

৩। চিত্রা রিসোর্ট

হরের কোলাহল ছেড়ে নদীর তীরে বসে প্রাকৃতি সৌন্দর্য উপভোগের জন্য প্রতিদিনই শত শত লোকের সমাগম ঘটে এখানে। বনভোজন, অবকাশ যাপন কিংবা পারিবারিক ভ্রমণের জন্য চিত্রা রিসোর্ট একটি উপযুক্ত জায়গা। প্রায় সাত বিঘা জায়গাজুড়ে এ রিসোর্টে রয়েছে কটেজ, শিশুপার্ক এবং চিত্রা নদীতে নৌ-ভ্রমণের ব্যবস্থা। পৃথিবির বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের আকা ছবি নিয়ে গঠিত একটি আর্ট গ্যালারী, নদীর তীরে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ, বাচ্চাদের খেলার জন্য শিশুপার্ক ও চিত্রানদীতে ভ্রমনের জন্য এমন আদর্শ স্থান খুব কমই আছে।

কিভাবে যাওয়া যায়:

নড়াইল শহরের চিত্রা নদীর তীরে অবস্থিত।  ঢাকা থেকে সড়ক পথে দুরত্ব ৩১০ কিঃমিঃ সময়-৫/৬ ঘন্টা। ঢাকা থেকে সরাসরি নড়াইলের বাস আছে। নড়াইল শহর হতে রিক্সা, ভ্যান কিংবা গাড়ী নিয়ে আসা যায় চিত্রা পাড়ের চিতা রিসোর্টে।

৪। স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ  

মুক্তিযুদ্ধে নড়াইলবাসীর অবদান অনেক। ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চ মধ্যরাত হতে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় থেকেই নড়াইলের আপামর জনসাধারণ স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে সংঘটিত হতে থাকে। ২৬শে মার্চ ভোরে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এর সাহায্য সহযোগিতায়স্থানীয় ব্যক্তি জনাব অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ এবং অন্যান্যদের সহায়তায় নড়াইল ট্রেজারী ভেঙ্গে অস্ত্রসস্ত্র বের করা হয় এবং বিপুল উৎসাহ নিয়ে লেঃ অবঃ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে বড়দিয়া এবং নলদীতে প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়। কিঞ্চিত প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা লেঃ মতিয়ার রহমান এর নেতৃত্বে যশোর সেনানিবাস আক্রমন করেন। যশোর জেলার ঝুমঝুমপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর ঘোরতর যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে শহীদ হন হাবিলদার বছির আহমেদসহ অনেকে। এর পর নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ হয় বড়দিয়া, পাটনা, গাজীরহাট, কালিয়া, হাউইখালী ব্রিজ, নাকসী, রঘুনাথপুর, লোহাগড়া, মাছিমদিয়া, কলাবাড়িয়া, কুমড়ী, কালনারচরসহ অনেক জায়গায়। এ সমস্ত যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষ শহীদ হন এবং আহত হন অনেকে, এছাড়া ধ্বংস হয় ঘরবাড়ী, ফসল, স্কুল কলেজ, শিল্প কারখানা এবং ব্যবসা বানিজ্য। পাক হানাদার বাহিনীর দোসরদের সহায়তায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। পাক হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে লঞ্চঘাট পন্টুনের উপর প্রায় ২৮০০ লোককে হত্যা করা হয়; যার দুঃসহ স্মৃতি এখনও বহন করে চলছে নড়াইলের মানুষ।

কিভাবে যাওয়া যায়:

ঢাকা থেকে সড়ক পথে আরিচা ফেরী পার হয়ে নড়াইল সদর । ঢাকা থেকে সড়ক পথে দুরত্ব ৩১০ কিঃমিঃ সময়-৫/৬ ঘন্টা

৫। ৭১-এর বধ্যভূমি

১৯৭১ সালে পুরো খুলনা বিভাগ জুড়েই পাকবাহিনী নারকীয় হত্যাকান্ড, ধর্ষণ, নির্যাতন এর মতো জঘন্য অপরাধ করেছে। নড়াইল জেলার নদীগুলোতে গণহত্যার পর লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হত, পাড়েও ফেলে রাখা হত অসংখ্য লাশ। এই বধ্যভূমি পাকবাহিনী ও তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগী আলবদর-রাজাকারদের সৃষ্ট। নড়াইল জেলা জজ আদালতের ২৫ গজ দূরে ডাক অফিসের দ্বিতল বাড়ির পেছনে রয়েছে এই বধ্যভূমি। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে অসংখ্য নারী-পুরুষকে ধরে এনে এই ক্যাম্পে নির্যাতন চালায় পাকবাহিনী । নির্যাতন-ধর্ষণের পর ক্যাম্পের পেছনে দেয়াল ঘেরা জঙ্গলে হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হত তাদের, কারো কারো পেট  ফেঁড়ে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হত। শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই সৌধ। 

কিভাবে যাওয়া যায়:

ঢাকা থেকে সড়ক পথে আরিচা ফেরী পার হয়ে কালনা ফেরি ঘাট হয়ে নড়াইল সদর, ঢাকা থেকে সড়ক পথে দুরত্ব ৩১০ কিঃমিঃ সময়-৫/৬ ঘন্টা।

৬। বরেণ্য চিত্র শিল্পী এসএম সুলতানের সমাধি

নড়াইলের গৌরব বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস,এম,সুলতানের স্মৃতি গণমানুষের কাছে চির ভাস্বর এবং আগামী প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার মানসে সুলতান কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে । সুলতান কমপ্লেক্সেবিশ্বেবরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের স্মৃতি বিজড়িত সংগ্রহশালাকে কেননতুনকরে গড়ে উঠেছে। চিত্রা নদীর পাড়ে নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া এলাকায় মনোরম পরিবেশে এই কমপ্লেক্সের অবস্থান। প্রায় ২৭ একর এলাকায় গড়ে উঠা কমপ্লেক্সে দুর্লভ নানা প্রজাতির গাছের সমারহ। পাখিডাকা নদী আর সবুজের মাঝে চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানকে সমাহিত করে রাখা হয়েছে । সমাধি সৌধের সামনেই রয়েছে সুলতানের আদি বাসস্থানের খানিক অংশ । এর পিছনে দ্বিতল আধুনিক ফটোগ্যালারিতে সুলতানের চিত্রকর্ম ও ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলি সংরক্ষণ করে রাখা আছে। সুলতানের দুর্লভ সব চিত্র কর্মগুলি দেখার জন্য প্রতিদিনই গ্যালারি খোলা থাকে। লাল সিরামিকে মোড়া এই কমপ্লেক্স শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ আর অপূর্ব সব চিত্রকর্ম সুলতান কমপ্লেক্সের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন। সুলতান শিশুদের ছবি আঁকানো শিখানোর জন্য নদীতে তৈরী করেছিলেন বজরা ‘‘শিশু স্বর্গ‘‘ । শিল্পীর তৈরী সেই শিশুস্বর্গটি কমপ্লেক্সের পাশেই চিত্রানদীর ধারে সংরক্ষণ করা হয়েছে । এই কমপ্লেক্সটির সংলগ্ন এলাকাতে শিল্পীর দেয়া নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শিশুস্বর্গ – যেখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখানো হয় ।

কিভাবে যাওয়া যায়:

ঢাকা থেকে সড়ক পথে আরিচা ফেরী পার হয়ে নড়াইল সদর। ঢাকা থেকে সড়ক পথে দুরত্ব ৩১০ কিঃমিঃ সময়-৫/৬ ঘন্টা।

৭। তপনভাগ দিঘী

বাগেরহাটের বিখ্যাত পীর হযরত খানজাহান আলী (রহ) কর্তৃক খননকৃত এই সুবিস্তৃত দীঘি ঘিরে বহু প্রাচীন কথকতা প্রচলিত রয়েছে। দীঘিটি আজও সারা বছর জুড়ে বিশেষত বর্ষায় প্রচুর পানি ধারণ করে এবং বিপুল পরিমাণ মৎস্য সম্পদের প্রাকৃতিক আধার হিসেবে এর বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। দীঘির দুপাড়ে সবুজ প্রাকৃতিক শোভা প্রাণ জুড়িয়ে দেয়।

শীতকালেও দীঘিতে বিভিন্ন জাতের  প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।    

কিভাবে যাওয়া যায়

তুলারামপুর থেকে সড়ক পথে ১৫ কি.মি।

বিশেষ সতর্কতা

 হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। একারণে কোন স্থানে ভ্রমণের পূর্বে বর্তমান ভাড়া ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিবেন। ওয়েবসাইটে যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রদত্ত নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্য চলো ঘুরি কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here