সন্দ্বীপ উপজেলার দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ

0
7
সন্দ্বীপ
সন্দ্বীপ
সন্দ্বীপ
সন্দ্বীপ: চট্টগ্রাম

সন্দ্বীপ উপজেলা চট্টগ্রাম উপজেলার অন্তর্গত একটি দ্বীপ। সন্দ্বীপ বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে দক্ষিণ পূর্ব উপকূলে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত। দ্বীপটির দীর্ঘ ৫০ কিলোমিটার আর প্রশস্ত ১০-১৫ কিলোমিটার। পনেরো শতকে এই দ্বীপটির আকার ছিলো ৬৮০ বর্গকিলোমিটার, কিন্তু যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে নদী ভাঙ্গনের ফলে দ্বীপের আয়তন কমে যেতে শুরু করেছে। সন্দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ।  সন্দ্বীপের মোট বনাঞ্চল ১১,২০০ একর। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূল থেকে সন্দ্বীপ এর দূরত্ব প্রায় ১০ মেইল।  নোয়াখালীর মূল ভূখন্ড থেকে পশ্চিমে ১২ মাইল দূরে অবস্থিত সন্দ্বীপ। আর চট্টগ্রাম সদর থেকে নদীপথে ৫০ কিলোমিটার দূরে ।

আরো পড়ুন: মহেশখালী উপজেলার দর্শণীয় স্থান ভ্রমণ

বাংলাদেশের সুন্দর জায়গা গুলোর মধ্যে সন্দ্বীপ অন্যতম,শুধুমাত্র সন্দ্বীপ সম্পর্কে ট্যুরিস্টদের ধারণা না থাকার কারনে এখানে তেমন কোন ট্যুরিস্ট অথবা ট্রাভেলার সন্দ্বীপ দেখা যায় না। যাতায়াত ব্যবস্থার অব্যাবস্থাপনা এটার অন্যতম কারন। তবে শীতকালে সন্দ্বীপ যেতে তেমন একটা কষ্ট হয় না বললেই চলে। চট্টগ্রাম শহর থেকে খুব সহজেই আপনি নদী পথে সন্দ্বীপ ভ্রমন করতে পারবেন।

একসময় বিশ্ব বিখ্যাত ছিলো সন্দ্বীপের জাহাজ নির্মাণ কারখানা, লবণ শিল্প এখন বস্ত্র শিল্প। ভারতবর্ষের মধ্যে দ্বীপটি ছিলো সমৃদ্ধশীল বন্দর। দ্বীপের চারপাশে বিশাল বিশাল জাহাজের আনাগোনা দেখা মিলে। এছাড়া সদ্বীপে হাট, বাজার, গাছপালা ও ফসল ভরা সবুজ মাঠ। অনায়াসে দ্বীপের সকল প্রান্তর ঘুরে দেখা যায়। দ্বীপের উত্তর দিকে গেলে দেখা মিলে তাজমহলের সাদৃশ্য শত বছর পুরাতন মরিয়ম বিবি সাহেবানী মসজিদ, এবং মসজিদ সংলগ্ন বড় একটি দিঘী ও মাজার। আরো আছে আমানুলের চর। দ্বীপের উত্তর-পূর্ব দিকে আছে উড়ির চর, কালাপানি। আর দক্ষিণ দিকে আছে ঐতিহ্যবাহী শুকনা দীঘি ও কালিয়ার চর। এছাড়াও সন্দ্বীপে আছে অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, স্বছ পানির পুকুর ও বড় বড় খেলার মাঠ। চারদিকের সব কিছু মিলিয়ে সন্দ্বীপ একটি অপরূপ সবুজ সমুদ্রবন্দর।

সন্দ্বীপের বিখ্যাত মিষ্টি খেতে আপনাকে দ্বীপের দক্ষিণে শিবের হাট যেতে হবে। অথবা নাজির হাটেও ভালো মিষ্টি পাওয়া যায়। সাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘুরতে পারেন আশেপাশে যা  অল্প সময়ে পুরো এলাকা ঘুরে দেখার জন্যে অসাধারন অপশন। এছাড়া দরদাম করে রিক্সা বা অন্যান্য যানবাহন নিয়েও যাওয়া যায়। শীতের সময় খেজুরের রস পাওয়া গেলে না খাওয়াটা বোকামি যা সন্দ্বীপের আশেপাশেই খোঁজ করলেই পাওয়া যাবে। গাছ থেকে সদ্য নামানো রসের মজাই আলাদা। যদি সম্ভব হয় স্থানীয়দের প্রিয় ঘন খেজুরের মিঠাই এর সাথে কোড়ানো নাড়িকেল আর চিতল পিঠা খেয়ে পারবেন।

যেসকল পর্যাটকেরা ক্যাম্পিং করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য শীতকালে আনন্দময়, উপভোগ্য আদর্শ জায়গা এই সন্দ্বীপ উপোজেলা। সন্দ্বীপে মাঝে মাঝে দেখা মিলে বাউল জারী সারি গানের আসর। এখানে আছে দেশের সর্ববৃহৎ কেওড়া কাঠের সেতু, দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ সোলার প্যানেল ‘পূরবী’ ইসলাম সাহেবের বিশাল খামারবাড়ি, দৃষ্টি আকর্ষণীয় ম্যানগ্রোভের বেষ্টনী, গুপ্তছড়া ঘাটের বিশাল জেটি আরো আছে অসংখ্য সবুজ গাছের পটে আঁকাবাঁকা রাস্তা। সন্দ্বীপের সৌন্দর্যের রূপে মুগ্ধ হয়ে ছুটে আসেন যুগে যুগে অনেক কবি ও সাহিত্যিকেরা।

কোথায় / কি খাবেন

সন্দ্বীপ একটি দ্বীপ হলেও এখানে অতি সহজে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল ধরনের খাবার পাওয়া যায়। আতিথেয়তার দিকে থেকে সন্দ্বীপ বাসীদের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। পর্যাটকেরা পাবেন সামুদ্রিক ও নদীর মাছ, মাংস, ডাব, পিঠা, শীতের মৌসুমের সুস্বাদু খেজুরের রস এবং রসের পায়েস। পর্যাটকেরা চাইলে নিজরাই বাজার করে রান্না করে খেতে পারেন। দ্বীপের দক্ষিণে আছে বিখ্যাত বিনয় সাহার মিষ্টি। সন্দ্বীপে বেশ কিছু ভালো মানের স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী খাবার হোটেল আছে।

কোথায় থাকবেন

সন্দ্বীপ শহরে এনাম-নাহার মোড়ে পর্যাটকদের থাকার জন্য কিছু সাধারণ মানের হোটেল আছে। তাছাড়া সেনেরহাটে একটি ভালো মানের হোটেল আছে। আর উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে থাকার ব্যাবস্থা আছে কিন্তু থাকার জন্য আগের থেকে থাকার অনুমতি নিয়ে নিতে হবে। যেসকল পর্যাটকেরা ক্যাম্পিং করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য সন্দ্বীপের পশ্চিম দিকে রহমতপুর জায়গাটি একদম উপযোগী।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সন্দ্বীপ যেতে হল্, সড়ক পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোন পরিবহনে চড়ে কুমিরা নামতে হবে। বাসে উঠে সুপারভাইজারকে বলে দিলে তারা  কুমিরা স্টিমার ঘাটে যাবার স্ট্যান্ডে নামিয়ে দিবে।

আর চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ যেতে হলে, চট্টগ্রাম অলংকার বা এ-কে-খান মোড় থেকে পরিবহন নিয়ে কুমিরা ঘাটঘর রোড যেতে হবে।

 সেখান থেকে রিকশা বা অটোরিকশা নিয়ে কুমিরা স্টিমার ঘাটে যেতে হবে। ঘাটের থেকে সন্দ্বীপ যাওয়ার জন্য  ছোট লঞ্চ ও স্পীডবোট আছে। কুমিরা স্টিমার ঘাট থেকে নৌপথে সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড় করে সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ঘাট পর্যন্ত যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সৌর বিদ্যুৎ

মুছাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প এনাম নাহার মোড়, সন্দ্বীপ থানার দক্ষিণ পাশে অবস্থিত।

কিভাবে যাওয়া যায়

স্থানটি উপজেলা কমপ্লেক্স হতে প্রায় ৪ কি: মি: পূর্বদিকে এনামনাহার মোড়ে অবস্থিত। উপজেলা কমপ্লেক্স হতে এনামনাহার মোড়, টেক্সি ভাড়া জনপ্রতি ১৫-২০ টাকা; রিক্সা ভাড়া ৪০-৫০ টাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here