
কাঞ্চননগর এর পেয়ারা বাগান
কাঞ্চননগর মুলত পেয়ারার জন্য সারাদেশে বিখ্যাত। এ অঞ্চলের পেয়ারা যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে দেশে-বিদেশে। আপেলের চেয়ে অধিক গুণ সম্পন্ন পেয়ারা, বাণিজ্যিকভাবে উৎপন্ন হয়ে থাকে কাঞ্চননগর। বড় বড় ডাঁসা পেয়ারা যা দেখলে চোখ ফেরানো যায় না। গন্ধ আর স্বাদের দিক থেকে এর তুলনা পৃথিবীতে নেই। সারা দেশে তাই একনামে পরিচিত চন্দনাইশের কাঞ্চননগর পেয়ারা। পেয়ারার বাগান রয়েছে চন্দনাইশের কাঞ্চননগর, হাশিমপুর, দোহাজারী এবং পটিয়ার খরনা, কচুয়াই ও কেলিশহরসহ বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকাজুড়ে । দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ, বোয়ালখালী, সাতকানিয়া, বাঁশখালী ও লোহাগাড়া উপজেলায় অন্তত ১৫-২০ হাজার একর পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে হাজার হাজার পেয়ারা বাগান রয়েছে। তবে এদের মধ্যে পটিয়া উপজেলার খরনা, কেলিশহর, হাইদগাঁও শ্রীমাই এলাকা, চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর, জঙ্গল হাশিমপুর, ছৈয়দাবাদ, লট এলাহাবাদ, কাঞ্চননগর, দোহাজারী, ধোপাছড়ি এলাকার উৎপাদিত পেয়ারা সর্বোৎকৃষ্ট, গন্ধ আর স্বাদের দিক থেকে অতুলনীয়।
সাধারনত পেয়ারা মৌসুমে বাগানগুলোতে হেক্টরপ্রতি গড়ে ১৫-১৬ টন করে পেয়ারা উৎপাদন হয়। মৌসুমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠা দোহাজারী, হামিশমুর, বাদামতল, বাগিচাহাট, খানহাট, কাঞ্চননগর, চক্রশালা, রৌশনহাট ও পটিয়া কমলমুন্সীরহাট, হাইদগাঁও সাতগাউছিয়া মাজার গেইট, দারোগা হাট, পানবাজার, ভট্টাচার্য হাট, এলাকায় বসে পাইকারি পেয়ারার হাট।
ছোট বড় পাহাড় ও টিলায় দেখা যায় পেয়ারার বাগান। খুব সকালে বাগান মালিক ও শ্রমিক বাগানে গিয়ে হলদে সবুজ এবং হলদে সাদা রং ধারণ করা পাকা পেয়ারা ছিঁড়ে এক জায়গায় স্তূপ করেন। চাষিরা পেয়ারা ছেঁড়া শেষে ছোট বড় ভাগ করেন, তারপর লাল রঙের কাপড়ের পুঁটলিতে করে বাগান থেকে বাজারে নিয়ে যান। পেয়ারা বিক্রির জন্য চন্দনাইশের সৈয়দাবাদ রেল স্টেশন, রৌশন হাট, বাদামতল, বাগিচাহাট ও দোহাজারী রেলস্টেশনে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাইকারি বাজার বসে।
কিভাবে যাওয়া যায়
চন্দনাইশ হতে প্রায় ০৮ কিলোমিটার, চন্দনাইশ হতে সিএনজি যোগে যাওয়া যায়। সিএনজি ভাড়া করার আগে ভাড়া ঠিক করে নেওয়া ভাল।
বাগিচাহাট কদম রাসূল (দ🙂 শরীফ
প্রতিদিন অসংখ্য মুসলমান দর্শনের জন্য বা জিয়ারাতের উদ্দেশ্য কদম মোবারক (দঃ) শরীফে আগমন করেন। মসজিদের পশ্চিম পাশে হযরত সৈয়দ শাহ আমির (রহঃ) আউলিয়ার মাজার রয়েছে। আর মসজিদের দক্ষিণ পাশে হযরত শেরে জামান খাঁন (রহঃ) সহ মোট ২২ জন আউলিয়ার মাজার।
চট্টগ্রাম শহর থেকে আরাকান সড়ক বা কক্সবাজার সড়ক দিয়ে চন্দনাইশ বাগিচাহাটস্থ খাঁন শাহী জামে মসজিদের যাওয়া যায়।। চন্দনাইশ হতে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে বাগিচাহাটস্থ খাঁন শাহী জামে মসজিদের অবস্থান যেখানে চন্দনাইশ হতে বাস অথবা সিএনজি যোগে যাওয়া যায়।
বি.জি.সি ট্রাষ্ট
২০০১ সালে চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নে বি.জি.সি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এটির অবস্থান চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম – কক্সবাজার মহাসড়কের পাশেই, যা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে বি.জি.সি ট্রাষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পার্শ্বে গ্রামীণ মনোরম পরিবেশে প্রায় ১০০ একর আয়তনবিশিষ্ট বিজিসি বিদ্যানগরের চন্দনাইশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। গ্রামীণ পরিবেশে অবস্থিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এ ক্যাম্পাসে সব ধরনের আধুনিক এবং সম-সাময়িক সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। বর্তমান সময়ের সকল প্রয়োজনীয় চাহিদা যেমন ভবনে ওয়াইফাই সুবিধা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, সেমিনার হল এবং নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে বি.জি.সি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে। দর্শনার্থী দের জন্য রয়েছে খেলার মাঠ, অন্যান্য সুন্দর লেক, বিশাল শহীদ মিনার। বঙ্গবন্ধু ফ্রিডম স্কোয়ার এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অন্যতম আকর্ষণ।
কিভাবে যাওয়া যায়
চট্টগ্রাম কক্সবাজার সংযুক্ত আরকান সড়ক রোড়, চন্দনাইশ ।
শঙ্খ নদী
আরাকানের মদক পাহাড় থেকে শঙ্খ নদীর উৎপত্তি যার অবস্থান বাংলাদেশ এবং আরাকান রাজ্যের মাঝামাঝি পাবর্ত্য অঞ্চলে । শঙ্খ নদীর দৈর্ঘ্য ২৭০ কি: মি:। এটা বান্দরবানের রোয়াংছড়ি এবং বান্দরবান সদর হয়ে চন্দনাইশের ধোপাছড়ি হয়ে পশ্চিম দিকে গিয়ে আবার বাঁশখালী খানখানাবাদ ইউনিয়নে এবং আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর হয়ে কর্ণফূলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মিলিত হয়েছে। বান্দরবানের আদিবাসীরা এ নদীটিকে রিগ্রাইখিয়াং নামে জানলেও পূর্বের সাংগু নদীর বর্তমান নাম কীভাবে শঙ্খ হলো তা এখনও জানা যাইনি । শঙ্খ নদীকে নিয়ে চট্টগ্রামে অনেক গান ও অনেক গীতিকাব্য রচিত হয়েছে।
কিভাবে যাওয়া যায়
চন্দনাইশ হতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নদীটির অবস্থান, চন্দনাইশ হতে বাস অথবা সিএনজি করে যাওয়া যায়।
হযরত ভূই খাজা (রঃ) জামে মসজিদ
চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা নামক ইউনিয়নে হযরত ভুঁই খো্য়াজা (রাঃ) জামে ঐতিহাসিক মসজিদ ও দরগা শরীফ। উক্ত মসজিদ ও দরগা শরীফটি মৃত আবুল খায়ের এর। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হতে ৫-৬ গজ ভিতরে হযরত ভুঁই খোয়াজা জামে মসজিদের অবস্থান। উক্ত মসজিদের ভিতরে হযরত ভুঁই খোয়াজা (রা:) এর পবিত্র মাজার শরীফ অবস্থিত। মাজার আর মসজিদকে বিভক্ত করেছে একটি রাস্তা রয়েছে। কথিত আছে, বিভক্তকারী সেই রাস্তায় কেউ অনৈসলামিক কাজ করলে তিনি স্বপ্নযোগে তাদের জানিয়ে দেন যে, মসজিদে যাওয়া আসার রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছো; সুতরাং সে ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকবে। মসজিদে ইমাম সাহেব গভীর রাতে উক্ত মসজিদে কয়েকজন মানুষকে নাজায আদায় করতে দেখেছেন বহুবার এবং সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে কবর জিয়ারত করতে ও দেখেছেন। আরও প্রচলিত আছে মসজিদের ভিতরে কেউ জুতা পায়ে প্রবেশ করলে জুতা খুলে রাখার পর জুতাগুলো মসজিদের বাইরে চলে যায় । এধরণের আরো অনেক ঘটনার কথা এলাকাবাসীর মুখে মাজার আর মসজিদকে নিয়ে সোনা যায়।
কিভাবে যাওয়া যায়
চন্দনাইশ হতে প্রায় ০৩ কিলোমিটার দূরে হযরত ভূই খাজা (রঃ) জামে মসজিদের অবস্থান, চন্দনাইশ হতে রিকসা অথবা সিএনজি যোগে সেখানে যাওয়া যায়।
চা বাগান
চা বাগানগুলো এক মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় যা ইন্দ্রিয়কে মোহিত করে। জমকালো, ঘূর্ণায়মান পাহাড়ের মধ্যে চা বাগানগুলো অবস্থিত, পাতার মৃদু কোলাহল পাখিদের সুরেলা গানের সাথে মিলিত হয়, প্রশান্তির সিম্ফনি তৈরি করে। সূর্য-চুম্বন করা সকালের পাতাগুলি সোনালি আভায় রঙিন, কুয়াশাচ্ছন্ন বিকেলগুলি বাগানগুলিকে শীতল আলিঙ্গনে আলিঙ্গন করে।
চট্টগ্রাম হতে বাসযোগে কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ নেমে সিএনজি/রিকশাযোগে অত্র চা বাগানে আসা যায়।