বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) উপজেলার দর্শনীয় স্থান

0
20

বোয়ালখালী উপজেলা চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত ১২ কিলোমিটার পূর্বে ১৩৭.২৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিস্তৃত একটি উপজেলা। এর উত্তরে আছে কর্ণফুলী নদী, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান উপজেলা, দক্ষিণে পটিয়া উপজেলা, পূর্বে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আর পশ্চিমে আছে কর্ণফুলী নদী ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন চন্দগাঁও থানা। বোয়ালখালী উপজেলার নামকরণ হয় বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক ও দরবেশ হযরত বু-আলী কালান্দর শাহ এর নামে।

মেধস মুনির আশ্রম

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার আহল্লা-করলডেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের করলডেঙ্গা পাহাড়ে মেধস মুনির মন্দির ও আশ্রমের অবস্থান। মেধস মুনির আশ্রমটি হিন্দুদের অন্যতম জনপ্রিয় বৃহত্তম তীর্থ স্থান। চট্টগ্রামে প্রথম এই আশ্রমের মাটি দিয়ে দুর্গার প্রতিমা ও দুর্গাপূজা হয়। যা প্রতিবছরই উৎযাপন হয়ে চলেছে। মোট৬৮ একর জায়গা জুড়ে স্থাপিত আশ্রমে প্রতিবছর মন্দিরে মহালয়ার মাধ্যমে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। আশ্রমে চন্ডী মন্দির, শিব মন্দির, সীতা মন্দির, কালী মন্দির সহ ১০ টি মন্দির আছে। আশ্রমের প্রধান ফটক দিয়ে ধুকতেই বাম দিকে চোখে পরে পদ্মপুকুর আর পুকুরের পারেই আছে বিশ্রামাগার। আশ্রমের চারদিকে ছড়িয়ে আছে নানা প্রজাতির বড় বড় গাছ ও ফুলের গাছ। আশ্রমের ভেতরে আধা কিলোমিটার গেলেই পড়ে ১৪০ টি সিড়ি, যা পাড়ি দিয়ে ৫০০ ফুট উপরে উঠলেই সামনে দেখা মিলে মেধস মুনির মন্দির। ১৪০ টি সিড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় চারপাশের সারি-সারি, উঁচু-নিচু পাহাড় আর পাহাড়ের মাঝে জুম চাষের অপরূপ সৌন্দর্য যা পর্যাটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মেধস মনির মন্দিরের পরেই আছে দেবী চণ্ডীর মুল মন্দির। মেধস মুনির মন্দির থেকে একটু সামনে ডানদিকে দেখা মিলবে সীতার পুকুর আর পুকুরের পেছনেই আছে ঝর্ণা। সীতার পুকুরের সামনেসিড়ির উপরেই আছেতারা মন্দির। তারা মন্দিরের নিচের দিকে আছে শিবমন্দির।শিবমন্দির এর নিচে আছে কামাখ্যা মন্দির। আর শেষে আছে কালীমন্দির। আশ্রমটি সুন্দর, নিরিবিলি, নির্জন একটি জায়গা, এখানে মানুষের আনাগোনা অনেক কম। একটি শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে ভালো লাগার সুন্দর সময় কাঁটাতে পারেন পর্যাটকেরা।

আশ্রমের মন্দিরের পেছনেপুণ্যার্থীদের এবং সাধু সন্ন্যাসীদের  থাকার জন্য সুব্যাবস্থা সম্পন্ন দোতলা ভবন রয়েছে।

কিভাবে যাবেন

চট্টগ্রাম সদরের বহাদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে ২৫-৩০ টাকা ভাড়ায় যেকোন লোকাল গনপরিবহনে চড়ে কানুনগোপাড়া টার্মিনালে অথবা দাশের দিঘিরপারে, সেখান থেকে ১৫০-২০০ টাকায় রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া করে নিয়ে অথবা লোকাল ভাবে ৩০-৪০ টাকা সিএনজি নিয়ে চলে যেতে পারেন করলডেঙ্গা পাহাড়ের মেধস মুনির আশ্রমে। এছাড়া পর্যাটকেরা চাইলে নিজের গাড়ি বা শহর থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাতে পারেন আশ্রমে।

কোথায় খাবেন

মেধস মুনির আশ্রমে পর্যাটকদের খাবার ব্যাবস্থা আছে। দুপুরের খাবার খাবার জন্য পর্যাটকদের আশ্রমে পৌঁছে ৭০-৮০ টাকা দিয়ে খাবার অর্ডার এর টিকিট কেঁটে নিতে হবে।

হযরত বু-আলী কালন্দর শাহ্‌ (রাহঃ) মাজার

চট্টগ্রাম বোয়ালখালী উপজেলার করলডেঙ্গা গ্রামে হযরত বু-আলী কালন্দর শাহ্‌ এর মাজার অবস্থিত। হযরত বু-আলী কালন্দার পানিপতি এর আসল নাম শেখ শরফুদ্দিন, তবে তিনি বু-আলী নামে বেশী পরিচিত। তিনি একজন সূফী সাধক ছিলেন। তার বাসস্থান ছিলো ভারতে। পানিপথের শহরে তার মাজার আছেযা ধর্মীয় তীর্থস্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম।হযরত বু-আলী কালন্দের জন্ম ১২০৯ সালে। তার বাবার নাম শেখ ফকর উদ্দিন এবং মায়ের নাম বিবি হাফিজা। তিনি মায়ের কাছ থেকে চার বছর বয়স থেকেই কোরআন শিক্ষা গ্রহন করেন এবং হিন্দু শাস্ত্রের উপরে জ্ঞান অর্জন করেন পণ্ডিত রাম সাহানি এর কাছ থেকে। তিনি তরুণ বয়সে সোহারার্দিয়া, কাদেরিয়া, নাকশাবন্দিয়া এর উপরেও জ্ঞান করেন। অল্প বয়সে তিনি পড়াশোনা শেষ করে দিল্লির কুতুব মিনারের নিকটে প্রায় বিশ বছর পড়াশোনা করেন। তিনি দিওয়ানে হযরত শরফুদ্দিন বু-আলী কালান্দার নামে একটি মহান ফার্সি কবিতার সংকলন প্রকাশিত করেন এবং পরবর্তীতে এটি খাজা শাহাউদ্দিন দ্বারা পাঞ্জাবী ভাষায় প্রকাশিত হয়।

লোককাহিনীত এর মাধ্যে জানা যায়,যে তিনি কার্নাল নদীর পানিতে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩৬ বছর সাধনা করেন, যার ফল স্বরূপ তাকে “বু-আলী” উপাধিতে আখ্যায়িত করা হয়। তার হযরত বু-আলী কালান্দার নামেই বোয়ালখালী উপজেলার নামকরন করা হয়।

এছাড়াও জানা যায়, একদিন হযতর মুহাম্মদ (সঃ) তার স্বপ্নে আসেন এবং তাকে তার ইচ্ছা পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। কালান্দার নবুওয়াত লাভের আর্জি করেন। তখন তাকে বলা হয় যে, নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে আর হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ছিলেন শেষ নবী। এর পরে তিনি আলী হতে চাইলেন এবং তাকে জানানো হয় যে এই মর্যাদা তাকে আগেই প্রদান করা হয়েছে। সব শেষে তিনি অন্তত আলী (রাঃ) এর সুবাস পাওয়ার আবেদন করেন এবং তার এই ইচ্ছা পুরণ করা হয়।

১৯০০ সাল থেকে প্রতিবছর ৫ ফাল্গুন হযরত শাহ্‌ বু-আলী শাহ্‌ (রাঃ) এর মহাসমারোহে ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। ওরশের দিন রীতি অনুসারে গরু-মহিষ জবাই দেওয়া হয়। ঠিক সেই সময়ে মাজারের চারপাশের গাছপালা থেকে অলৌকিক ধোয়া বের হয়। এই অলৌকিক দৃশ্য দেখার জন্য ওরশের সময় হাজার হাজার ভক্তা নর-নারী উপস্থিত হন। ওরশের দিনে এই অলৌকিক ধোয়া বিশ্বাস ও আস্থার সাথেধর্মানুরাগীদের আকর্ষিত করে।

কিভাবে যাবেন

চট্টগ্রাম সদরের বহাদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে যেকোন লোকাল গনপরিবহনে চড়ে কানুনগোপাড়া টার্মিনালে অথবা দাশের দিঘিরপারে নেমে সেখান থেকে ট্যাম্পু নিয়ে মধ্যম করলডেঙ্গা মাজারে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন

করলডেঙ্গা গ্রামে পর্যটকদের থাকার মত কোন ব্যবস্থা নেই তাই পর্যাটকদের থাকার জন্য চট্টগ্রাম সদরে ফিরে যেতে হবে। সেখানে অনেক বিভিন্ন মানের হোটেল পাওয়া যায়।

কি খাবেন

মাজারের  আশে পাশে খাবার খাওয়ার মত কোন হোটেল নেই তাই পর্যাটকদের খাবার সাথে নিয়ে আসতে হবে।

শ্রী শ্রী কালাচাঁদ ঠাকুর বাড়ি

চট্টগ্রাম বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়া গ্রামে অবস্থিত। কালাচাঁদ ঠাকুরের পূর্ব নাম ছিলো শ্রী শ্রী লক্ষ্মী-জনার্ধন বাসুদেব। তিনি এই ঠাকুর বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা। বোয়ালখালীর পোপাদিয়ায় প্রায় পাঁচ একরের বেশী জায়গা জুড়ে নিরিবিলি, পরিষ্কার, শান্ত পরিবেশে গড়ে উঠেছে কালাচাঁদ ঠাকুর বাড়ি। ষাট বছর পূর্বে ঠাকুর বাড়ির মূল মন্দিরটি তৈরি করা হয়। বিগত ত্রিশ বছরের মধ্যে বাকি অন্যান্য স্থাপনাগুলো গড়ে উঠে। কালাচাঁন্দ ঠাকুর বাড়ির কাছেই এলে সকলের দৃষ্টি আকর্ষিত করে ঠাকুর বাড়ির সুদৃশ্য প্রধান ফটক। প্রধান ফটকের উপরে দুই পাশে আছে দুইটি সিংহ মূর্তি এবং তার মাঝখানে আছে শঙ্ক। প্রধান ফটক থেকে সামনে দশ মিনিট পায়ে হাঁটলেই পৌঁছে যায় মন্দিরে।মন্দির সংলগ্নে আছে একটি পুকুর, এছাড়াও আছে শিব মন্দির, কালাচাঁন্দ ঠাকুর মন্দির, ভোগ রান্নার জন্য আছে রান্না ঘর, প্রসাদ বিতরণ কেন্দ্র, আছে লাইব্রেরী, গোশালা।দূর-দুরান্ত থেকে মনের বাসনা পূরণ ও কালাচাঁদ ঠাকুর বাড়ি পরিদর্শন করতেতিথিতে ভক্তরা ছুটে আসেন এবং এখানে বছরের যেকোন সময় ভক্তারা আসেন পুজো দিতে। মন্দিরে কেউ ভোগ প্রদান করতে চাইলে সকাল ১১টার মধ্যে রসিদ কেঁটে কুপন সংগ্রহ করতে হবে।

কিভাবে যাবেন

চট্টগ্রাম সদরের বহাদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে যাকোন লোকাল বাস বা রিজার্ভ ৩০০-৪০০ টাকা ভাড়ায় সিএনজি নিয়ে কালুরঘাট ব্রিজ পার করে সরাসরি গোমদন্ডী ফুলতল নামতে হবে। গোমদন্ডী ফুলতল থেকে লোকাল সিএনজি নিয়েবা রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে কানুনগোপাড়া সড়ক দিয়ে ২০-২৫ মিনিট সময়ে সরাসরি শ্রী শ্রী কালাচাঁদ ঠাকুরবাড়ির প্রধান তোড়নে পৌঁছে যাওয়া যায়।

কোথায় খাবেন

কালাচাঁদ ঠাকুর বাড়িতে উপস্থিত পর্যাটকদের বা ভক্তাদেরভোগ প্রদান করা হয়। এছাড়াও ঠাকুর বাড়ি এর আশেপাশে খাওয়ার জন্য কিছু সাধারণ মানের হোটেল আছে আর কিছু প্যাকেটযাত খাবারের দোকান আছে পর্যাটকেরা চাইলে তাদের পছন্দের খাবার কিনে খেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

কানুনগোপাড়ায় পর্যাটকদের বা ভক্তাদের থাকার জন্য কোন ব্যবিস্থা নেই তাই থাকার জন্য পর্যটকদের চট্টগ্রাম সদরে ফিরে যেতে হবে।

শাক্যমুনি বিহার

বোয়ালখালী উপজেলাধীন শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের জৈষ্ঠ্যপুরায় অবস্থিত। এ তীর্থস্থানকে ঘিরে বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারীদের পূজা অর্চনা, ধর্মীয় উৎসব উদযাপন ও বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যক্রম সম্পাদিত হয়।

কিভাবে যাবেন

বোয়ালখালী উপজেলা সদর হতে কানুনগোপাড়া সড়ক হয়ে জৈষ্ঠ্যপুরা গোলক মুন্সীর হাট হতে আধা কিলোমিটার উত্তরে বাস বা সিএনজি যোগে যাওয়া যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here