
বাশঁখালী বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী চট্টগ্রাম জেলার একটি উপজেলা। ১৪৫.৫২ বর্গমাইল আয়তনের অপরূপ উপজেলা এটি। উপজেলার উত্তরে প্রবাহিত হয়েছে সাঙ্গু নদী ও আনোয়ারা উপজেলা, দক্ষিণে আছে চাকুরিয়া উপজেলা ও পেকুয়া উপজেলা, পুর্বে আছে সাতকানিয়া উপজেলা ও লোহাগাড়া উপজেলা, এবং পশ্চিমে আছে কুতুবদিয়া চ্যানেল, কুতুবদিয়া উপজেলা ও বঙ্গোপসাগর।
বাশঁখালী খানখানাবাদ সমুদ্র সৈকত

বাশঁখালী সমুদ্র সৈকতটি ছনুয়া, বড়োঘোনা, গন্ডামারা, হালিয়াপাড়া, সরল, রত্নপুর, বাহারছড়া, খানখানাবাদ উপকূল মিলিয়ে ৩৭ কিলোমিটার বিস্তৃত। দিগন্ত বিস্তৃত নির্জন সমুদ্র সৈকতে সাগরের বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য, চারদিকে অবাধ লাল কাঁকড়ার বিচরণ, সাঙ্গু নদীর পাড়ে পর্যাটকদের মনোমুগ্ধকর নিরিবিলি আপরূপ একটি সমুদ্র সৈকত এটি। বাশঁখালীর ৮ কিলোমিটার বিস্তৃত ঝাউবনের, বালুকাময় বেলাভূমি নিয়ে অন্যতম পর্যাটক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে খানখানাবাদ সমুদ্র সৈকত।
কিভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম শহরের বহাদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাস বা সিএনজি নিয়ে গুনাগরি বাজারে নেমে সেখান থেকে লোকাল সিএনজি নিয়ে যেতে পারেন বাশঁখালী খানখানাবাদ সমুদ্র সৈকত।
ভ্রমণ শেষে পর্যাটকদের ফিরে যেতে হলে সৈকত থেকে ফেরার যানবাহন সহজে পাওয়া যায়না, তাই আসার সময় পর্যাটকদের সিএনজি রিজার্ভ করে নিয়ে আসালে গন্তব্যে ফিরতে সুবিধা হবে।
কোথায় থাকবেন
বাশঁখালীতে পর্যাটকদের থাকার মত ভালো কোন সুবিধা না থাকায় পর্যাটকেদের চট্টগ্রাম শহরে ফিরে আসতে হবে। সেখানে অনেক ভালো মানের হোটেল পাবেন। কিন্তু নিরিবিলি পরিবেশে ক্যাম্পিং করে থাকা মত এটি একটি আদর্শ জায়গা।
কোথায় খাবেন
খানখানাবাদ সমুদ্র সৈকতে তেমন কোন খাবারের দোকান নেই, তাই পর্যাটকেরা প্রয়োজনে তাদের সাথে খাবার নিয়ে আসতে পারেন। বাশঁখালী বাজারে সাধারণ মানের কিছু খাবার হোটেল আছে। পর্যাটকদের মন মতো ভালো মানের খাবার খেতে হলে চট্টগ্রাম শহরে যেতে হবে।
বাশঁখালী ইকোপার্ক

বাশঁখালী ইকোপার্কটি বনাঞ্চল, উঁচু-নিচু পাহাড়, নানা জীব বৈচিত্র, ও সচ্ছ পানির লেক মনোরম দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে গড়ে উঠেছে। এটি বাশঁখালী উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বাশঁখালী ইকোপার্কটি সরকারী উদ্যেগে প্রায় ১০০০ হেক্টর বনভূমি নিয়ে বন্যপ্রাণীর আবাস্থল উন্নয়ন, জীব বৈচিত্র রক্ষা, ইকো ট্যুরিজাম ও চিত্তবিনোদনের উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়। পার্কার বাম দিকে বামের ছড়া আর ডান দিকে ডানের ছড়া নামের দুইটি সুবিশাল লেক আছে। লেক দুটি পারাপারের জন্য আছে নান্দনিক দুইটি ঝুলন্ত ব্রিজ, যার দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুট। বাশঁখালী ইকোপার্ক এর এই সেতুটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু। সৌন্দর্যমন্ডিত ইকো পার্কের বনভূমিতে আছে ঝাউ বাগান, সেগুন বাগান, জুম ক্ষেত, চম্পাফুল, বৈলাম, সিভিট, গুটগুটিয়া, গর্জন প্রভৃতি বনাঞ্চলে হাতছানি দেখে পর্যাটকরা মুগ্ধ হন। এছাড়া পার্কে আছে পিকনিক স্পট, বোট রাইডিং, দ্বিতল রেস্ট হাউজ, রিফ্রেশমেন্ট কর্নার, মিনি চিড়িয়াখানা, হিলটপ কটেজ, ওয়াচ টাওয়ার, মিনি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বন্য পশু-পাখি প্রজনন কেন্দ্র, ভাসমান প্ল্যাটফরম, বন্য প্রানী ও উদ্ভিদ তথ্য সম্বেলিত শিক্ষাকেন্দ্র, আর আছে দুটি লেকে মাছ ধরার সুবিধা। শীতের মৌসুমে পার্কটি মুখরিত হয়ে থাকে অতিথি পাখির কলকাকলিতে। ঋতু পরিবর্তন এর সাথে সাথে ইকোপার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পরিবর্তন হতে থাকে। পার্কার সুউচ্চ পাহাড়ে দাঁড়ালে দেখা মিলে বঙ্গোপসাগরের আথৈ জলরাশি, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে আসা ঝর্ণাধারা আর বিকালে সূর্যাস্তে নয়নাভিরাম দৃশ্য। বাশঁখালী ইকোপার্কটি খোলা থাকে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত।
কিভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম শহর থেকে বাশঁখালী উপজেলা যেতে হলে যেকোন লোকাল বাস বা সিএনজি নিয়ে যাওয়া যায়। যেতে সময় লাগে দুই ঘন্টা থেকে আড়াই ঘন্টা। সেখান থেকে বাশঁখালী ইকোপার্কে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
কোথায় থাকবেন
বাশঁখালী ইকোপার্কে পর্যাটকদের থাকার জন্য আছে হিলটপ কটেজ ও ঐরাবতি নামে বন বিভাগের দুইটি বিশ্রামাগার।
কোথায় খাবেন
বাশঁখালীতে পর্যাটকদের খাবার মত সাধারণ মানের কিছু খাবার হোটেল আছে। তাছাড়া মনছুড়িয়া বাজারে সাধারণ মানের কিছু চা-নাস্তার দোকান আছে। তবে ভালো মানের খাবার খেতে হলে পর্যাটকদের চট্টগ্রাম শহরে এসে খেতে পারেন।
বখশী হামিদ মসজিদ
বখশী হামিদ মসজিদ চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামে একটি বড় পুকুরের পশ্চিমদিকে অবস্থিত। মিহরাবের উপর স্থাপিত একটি আরবি শিলালিপিতে ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে সুলায়মান কররানী কর্তৃক একটি মসজিদ নির্মাণের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এর বিভিন্ন স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, বর্তমান মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে একটি মুগল ইমারত। আদি শিলালিপিটি পূর্বদিকের সম্মুখভাগে প্রধান প্রবেশপথের উপরে স্থাপিত ছিল, বর্তমানে হারিয়ে গেছে। ইটের তৈরি মসজিদটি একটি বহির্দেয়াল দ্বারা ঘেরা। এর পূর্বদিকের ঠিক মাঝখানে মসজিদের কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের অক্ষে খিলান দ্বারা নির্মিত একটি তোরণ মসজিদটির খিলান দ্বারা নির্মিত পাঁচটি প্রবেশপথের তিনটি পূর্বদিকে এবং উত্তর ও দক্ষিণের প্রতিদিকে একটি করে।
পূর্বদিকের তিনটি প্রবেশপথ একেকটি অর্ধগম্বুজ ভল্টের নিচে নির্মিত এবং বাইরের দিকে এগুলি খাঁজকাটা নকশা ধারণ করে আছে। অভ্যন্তরভাগে পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব কুলুঙ্গি তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অর্ধ অষ্টকোণাকার, কিন্তু পাশেরগুলি আয়তাকার। প্রধান মিহরাব ও কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের রয়েছে যথারীতি আয়তাকার অভিক্ষেপ, যার দুপাশে রয়েছে বৃত্তাকার ক্ষুদ্র বুরুজ। এ বুরুজগুলি প্যারাপেটের উপর পর্যন্ত উঠে গেছে এবং শীর্ষভাগে রয়েছে কলসচূড়াসহ স্থূল ধরনের ক্ষুদ্র গম্বুজ। দুপাশের গম্বুজ দুটি কৃত্রিম, যা অর্ধগম্বুজাকৃতি ভল্টের উপর স্থাপিত। সবগুলি গম্বুজের শীর্ষভাগ সুন্দর পদ্ম ও কলসচূড়া দ্বারা পরিশোভিত। কেন্দ্রীয় গম্বুজের ভেতরের দিকে রয়েছে একসারি পাতার অলংকরণ; গম্বুজের শীর্ষভাগ তিনটি প্রস্ফুটিত সংবদ্ধ রোজেট দ্বারা চিত্রিত।
কিভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম শহর থেকে যে কোন বাহনে গুনাগরি বাজার, গুনাগরী বাজার হতে ছোট ছোট বাহন (সিএনজি/রিকশা) যোগে 2 কি:মি পশ্চিমে।
বাঁশখালী ঋষিধাম কুম্ভমেলা
বাঁশখালী ঋষিধাম: বাঁশখালী ঋষিধাম বহুযুগ পুর্বে প্রতিষ্ঠালাভ করে। মোহন্ত শ্রীমৎ অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ ১৯৫৭ সাল থেকে কুম্ভমেলার প্রবর্তন করেছিলেন। বাঁশখালী ঋষিধামে ৩ বছর পর পর অনুষ্টিত হয় কুম্ভমেলা। এতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত ও সন্ন্যাসীরা ভিড় করেন। কুম্ভমেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামেও উৎসবের আবহ তৈরি হয়। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ভারতের চারটি স্থানে কুম্ভমেলা হয়। এগুলো হলো হরিদ্বার, প্রয়াগ, নাসিক ও উজ্জয়িনী। তিন বছর পর চক্রাকারে চারটি স্থানে কুম্ভমেলা বসে। সে হিসাবে একেকটি স্থানে ১২ বছর পরপর এই মেলা ঘুরে আসে। বাংলাদেশে একমাত্র ঋষিধামেই ৩ বছর পরপর এই মেলার আয়োজন হয়। প্রতিবারই ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক সন্ন্যাসী আসেন। এটি এক মহা মিলনমেলা।
কিভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম শহর থেকে যে কোন বাহনযোগে ৪০ কি:মি দক্ষিণে রামদাস মুন্সির হাট সংলগ্ন এলাকায় নেমে পায়ে হেটেই যাওয়া যায়।
বেলগাঁও চা বাগান
বাঁশখালী উপজেলার ১ নং পুকুরিয়া ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকার প্রায় ৩ হাজার একর জায়গা জুড়ে বেলগাঁও চা বাগানটি অবস্থিত। এটি ব্রাক এর ব্যপস্থাপনায় সৃজিত ও পরিচালিত। চা বাগানে উঁচু নিচু পাহাড়ের চূড়ায় কেবল চা গাছ দেখা যায়। এ বাগানের চা অত্যন্ত সুস্বাদু এবং গুণগত মানসম্পন্ন। ২০১৮ সালে এ বাগানে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চা বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ক্লোন চা উৎপাদনে বাগানটি বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যা মূলতঃ বিদেশে রপ্তানী হয়। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিদিন বাগানের সর্বত্র আধুনিক উপায়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করায় প্রতিদিনই নতুন নতুন কচি পাতা গজিয়ে উঠছে। শীত মৌসুম আসতে না আসতেই এই চা-বাগানে পর্যটকরা ভিড় জমান বাগানের নতুন কচি পাতা গজিয়ে উঠার দৃশ্য দেখার জন্য। যেদিকে তাকানো যায় শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ। পাহাড়-লেক-টিলা এসবকিছু মিলে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী বেলগাঁও চা বাগান। তাই সারা বছরই অসংখ্য ভ্রমণ পিপাসু এ চা বাগানটি পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।
কিভাবে যাবেন
পুকুরিয়া ইউনিয়নের পূর্বাংশের পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত। চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে ২৩ কিঃমিঃ দক্ষিণে বাঁশখালী পুকুরিয়া চানপুর বাজার নেমে পূর্বদিকে ২ কিঃমিঃ যে কোনো বাহনে যাওয়া যায়।
মালেকা বানু মসজিদ
ঐতিহাসিক মালেকা বানু চৌধুরীর জন্মস্থান চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সরল ইউনিয়নে। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সরল ইউনিয়েনে অবস্থিত মালেকা বানুর মসজিদটি। এখানে বিশাল একটা দীঘি ছিল এককালে। কিন্তু কালের আবর্তে দীঘিটা আজ আর নেই। এক চোখের পথ ছিল এই মালেকাবানুর দীঘি। দীঘির পশ্চিম পাশে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে মালকাবানুর মসজিদটিই এখন স্মৃৃতির স্বাক্ষর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদের দেওয়ালে পূর্ব পাশে খোদাইকৃত একটি পলকে মালকাবানু চৌধুরী মসজিদের সংক্ষিপ্ত লিপিবদ্ধ ছিল। মোগল শাসনামলের শেষ দিকে জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরী এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি ছিলেন ঐতিহ্যবাহী মালেকা বানু চৌধুরীর পিতা। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মালেকা বানুর পিতা আমির মোহাম্মদ চৌধুরী ছিলেন তৎকালের প্রভাবশালী জমিদার। তার আট সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যা মালেকা বানু চৌধুরী। তার বাবার জিবদ্দশায় মালেকা বানু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চট্টগ্রামের আনোয়ারার আরেক জমিদার পুত্র মনু মিয়ার সঙ্গে। মনুমিয়া জমিদার বংশের পুত্র হলেও মালেকা বানু ছিলেন বাঁশখালী থানার সরলা গ্রামের বিখ্যাত এক সওদাগর আমির মোহাম্মদের কন্যা। মালেকা বানুর পিতা আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর আট সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যা মালেকা বানু চৌধুরী। মনুমিয়া একদিন পাইক পেয়াদা সঙ্গে নিয়ে জমিদারি তদারকিতে বাঁশখালীর সরলা গ্রামের সওদাগর বাড়িতে পৌঁছে সাময়িক বিশ্রাম নেন। এ সময় মনুমিয়া অপূর্ব সুন্দরী সওদাগর কন্যা মালেকা বানুকে কাজীর মক্তবে অধ্যয়নরত অবস্থায় দেখতে পান। তখন থেকেই মালেকা বানুর প্রেমে পড়েন মনুমিয়া। এরপর প্রেমের টানে মনু বারবার ছুটে যেতেন মালকা বানুর বাড়িতে। অবশেষে কাজীর মাধ্যমে মালেকার বাবার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন মনু। মালেকার বাবা সওদাগর রাজি হলেও বিয়েতে মালেকা রাজি ছিলেন না। কারণ হিসেবে মালেকা মনুকে বলেছিলেন- সাম্পানযোগে নদী পার হতে তার ভয় করে। কারণ শঙ্খ নদীর এপারে মনুমিয়ার বাড়ি ওপারে মালেকার। কাজেই বধূ সেজে মনুমিয়ার বাড়ি যেতে হলে উত্তাল শঙ্খনদী পাড়ি দিতে হবে। মালেকার মুখে এ কথা শুনে মনুমিয়া স্থির করলেন শঙ্খের বুকে বাঁধ নির্মাণ করবেন। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। মনু মিয়া শঙ্খ নদীর বুকে নির্মাণ করলেন বিশাল এক বাঁধ। তারপর বধূ সাজিয়ে সড়কপথে মনুর রাজপ্রাসাদে এনে তুললেন মালেকাকে। জনশ্রুতি আছে মালেকা বানু ও মনুমিয়ার বিয়ে হয়েছিল খুব জাঁকজমকপূর্ণভাবে। একমাস ধরে চলেছিল তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান। তাদের সংসারে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হলে মালেকা বানু স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে পিতৃবাড়ি বাঁশখালীর সরলে চলে আসেন।
সাত পুত্রসন্তান ও এক কন্যার জনক আমির মোহাম্মদের আদরের একমাত্র দুলারী মালেকা বানুর বিয়ের পর নিঃসঙ্গ পিতা, কন্যার স্মরণে বাঁশখালীর সরলে নির্মাণ করেন একটি মসজিদ ও দীঘি। যা ইতিহাসে মালেকা বানুর মসজিদ ও দীঘি নামে পরিচিত। মসজিদে ফরাসি ভাষায় একটি শিলালিপি ছিল এমন তথ্য থাকলেও বর্তমানে তা আর নেই। জনশ্রুতিতে জানা যায়, পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন দুর্যোগে বিলীন হযয়ে যায় ফরাসি ভাষায় লিপিবদ্ধ শিলালিপিটি। শত শত বছরের প্রাচীন ইতিহাসের স্মৃতিবহ মসজিদটির প্রকৃত তথ্য জানা এখনও সম্ভব হয়নি।
কিভাবে যাবেন
বাঁশখালী উপজেলার জলদী মিয়ার বাজার হতে ৩ কি:মি পশ্চিমে সরল ইউনিয়নের মালেকা বানু মসজিদে সড়কপথে যাওয়া যায়।