মিরসরাই উপজেলার দর্শনীয় স্থান

0
28

উপজেলার অবস্থান চট্টগ্রাম জেলার ৬০ কিলোমিটার সর্ব উত্তরে। এর আয়তন ৪৮২.৮৮ বর্গ কিলোমিটার। মিরসরাইকে চট্টগ্রাম জেলার প্রবেশদ্বার বলা হয়। এর উত্তরে ফেনী সদর উপজেলা, দক্ষিণে সীতাকুণ্ড উপজেলা, পূর্বে ফটিকছড়ি উপজেলা এবং পশ্চিমে সন্দ্বীপ উপজেলা। মুহুরি নদী মিরসরাই উপজেলাকে ফেনী উপজেলা এবং নোয়াখালী উপজেলা থেকে আলাদা করেছে। মিরসরাই উপজেলায় সড়ক পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মাধ্যমে ও সিলেট থেকে মিরসরাই সড়ক পথে বা রেল পথে  যোগাযোগের সুবিধা রয়েছে।

ঢাকা থেকে বাসে

ঢাকা সায়েদাবাদ বা কমলাপুর থেকে চট্টগ্রামগামী বিআরটিসি, গ্রীনলাইন, হানিফ, ঈগল, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী, এস আলম, সোহাগ, প্রভৃতি এসি এবং নন এসি পরিবহন এর সুবিধা আছে।যার ভাড়া সর্বনিম্ন ৪৫০ থেকে সর্বউচ্চ ভাড়া ১২০০ এর মধ্যে হতে পারে। বাসে উঠে সুপারভায়জারকে বলে দিলেই আপনাকে মিরসরাই নামিয়ে দিবে।

ঢাকা থেকে ট্রেনে

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে যে কোন চট্টগ্রামগামী অন্তঃনগর ট্রেনে চড়ে ফেনী স্টেশন নামতে হবে। শ্রেনী ভেদে যার ভাড়া ২৫০ থেকে ৮০০ টাকা হতে পারে। ফেনী স্টেশন থেকে ১৫ থেকে ২০ টাকা রিক্সা বা অটোরিক্সা ভাড়া নিয়ে মহিপাল বাস স্ট্যান্ড যেতে হবে, তারপরে সেখান থেকে যে কোন লোকাল বাস নিয়ে মিরসরাই যাওয়া যাবে।

মহামায়া লেক

মিরসরাই উপজেলার ৮নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত  ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ যেটি মহামায়া লেক বা মহামায়া ইকো পার্ক নামে পরিচিত। ছোটবড় অসংখ্য পাহাড়ের কোলঘেঁষে আঁকাবাঁকা স্বচ্ছ পানির জলাধারের অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে গড়ে উঠেছে মহামায়া লেক। মহামায়া লেকে ভ্রমনপিপাসু পর্যাটকদের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কায়াকিং।

মহামায়া ইকো পার্কে প্রবেশে জনপ্রতি টিকিট মূল্য ১০ টাকা।

আট কিলোমিটার লেকে চারপাশের এবং ঝর্ণার কাছ থেকে কায়াকিং এর অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ঘন্টা প্রতি কায়াকে খরচ হবে ঘন্টায় ৩০০ টাকা। যেখানে দুই জন চড়তে পারবে এবং প্রত্যেক এর জন্য আছে লাইফ জ্যাকেট এর সুবিধা তাই পর্যাটকেরা নিশ্চিন্তে কায়াকিং করতে পারবেন। তবে ছাত্রছাত্রীদের জন্য আছে ভাড়ায় ছাড় এর সুবিধা। তারা তাদের স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দেখিয়ে ১০০ টাকা ছাড় পেতে পারেন। কায়াকিং এর সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

এছাড়া ৮/১০ অথবা ১৫/২০ জনকে একসাথে নিয়ে লেকে ঘুরতে হলে ইঞ্জিন চালিত মাঝারি বা বড় নৌকা নেওয়ার সুবিধা আছে। যার ভাড়া ৮০০ থেকে ১০০০ অথবা ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা হবে, সেক্ষেত্রে ভাড়া দরদাম করে নেওয়া শ্রেয়।

পর্যাটকেরা চাইলে লেকের পাহাড়ি ঢাল থেকে নেমে আসা শীতল ঝর্ণায় গোসল করার মজা নিতে পারেন।

এছাড়া মহামায়া ইকো পার্কে বনভোজনের দারুণ সুবিধা আছে। আর লেকের পাশে বিস্তীর্ন ভূমিতে পর্যাটকেরা ক্রিকেট বা ফুটবলও খেলতে পারেন।

মহামায়া লেকে সপ্তাহের যেকোন দিনে কায়াকিং, বনভোজন, খেলাধুলা এর সুবিধার পাশাপাশি রাতে ক্যাম্পিং করতে পারেন। ক্যাম্পিং এর সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত। এর জনপ্রতি ক্যাম্পিং প্যাকেজের মুল্য ৬০০ টাকা। ক্যাম্পিং এর জন্য সর্বনিম্ন ৪ জন থেকে সর্বোচ্চ ৩০ জন থাকতে পারবেন। তবে এখনো পর্যন্ত মেয়েদের ক্যাম্পিং করার অনুমতি হয়নি। যেসকল পর্যাটকেরা ক্যাম্পিং করতে ইচ্ছুক তাদের আগে থেকেই বুকিং কনফার্ম করে নিতে হবে। যোগাযোগ এর জন্য মোবাইল নং- ০১৮১৬১১০৩০০, ০১৭১৯৩৯৯৯১৫, বা ০১৬১৬৭৯৬৯৬৯।

কাম্পিং প্যাকেজে যা যা থাকছেঃ

  • রাতের খাবার
  • সকালের খাবার
  • তাবু
  • হ্যামোক
  • ক্যাম্প ফায়ারিং
  • বারবিকিউ এবং পরোটা

বিঃদ্রঃ- ক্যাম্পিং এ যেকোন ধরনের মাদক দ্রব্য বহন বা সেবন সম্পুর্নরূপে নিষিদ্ধ।

কোথায় খাবেন

মহামায়া লেকে খাবারের কোন সুবিধা নেই, কিন্তু পর্যাটকেরা চাইলে সাথে খাবার নিয়ে আসতে পারেন। ঠাকুরদিঘি বাজারে কিছু ছোট ছোট খাবারের হোটেল আছে, তাছাড়া মিরসরাই বাজারে কিছু সাধারণ মানের খাবার হোটেল আছে।        

কিভাবে যাবেন

সড়ক পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মিরসরাই সরাসরি বাসে যেতে হলে, ঢাকা কমলাপুর অথবা সায়েদাবাদ থেকে বিআরটিসি, হানিফ, ঈগল, গ্রীনলাইন, এস আলম, শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক প্রভৃতি পরিবহনের এসি, নন এসি বাস এর সুবিধা আছে।পর্যাটকেরা চাইলে বাসে উঠে সুপারভারজারকে বলে দিতে পারেন, “যে তারা মহামায়া লেকে যাবেন”। আর চট্টগ্রাম শহর এর অলংকার সিটি গেট থেকে যেকোন লোকাল বাসে যেতে পারেন, জন প্রতি বাস ভাড়া ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা। সময় লাগবে ১ ঘন্টা। বাস থেকে মিরসরাই এর ঠাকুরদিঘি বাজারে নেমে খুব সহজে পেয়ে যাবেন আটোরিকশা, সিএনজি অথবা হিউমেন হলার। যার ভাড়া পড়বে সর্ব নিম্ন ১০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। পর্যাটকেরা চাইলে মিরসরাই এর চারপাশের পাহাড়ি মনোরম দৃশ্য গুলো উপভোগ করতে করতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট এর পথ পায়ে হেঁটেও যেতে পারেন। নিজেস্ব গাড়ির সুবিধা থাকলে সরাসরিও চলে যেতে পারেন মহামায়া লেকে।

রেলপথে ঢাকা বা সিলেট থেকে চট্টগ্রাম মিরসরাই মহামায়া লেকে আসতে হলে যে কোন চট্টগ্রামগামী অন্তঃনগর ট্রেনে চড়ে ফেনী স্টেশনে নামতে হবে। তারপরে সেখান থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা নিয়ে ফেনী মহিপাল বাস স্ট্যান্ডে নেমে চট্টগ্রামগামী বা যেকোন লোকাল বাসে চড়ে ঠাকুরদিঘি   বাজারে আসতে পারেন। জনপ্রতি বাস ভাড়া ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এবং সেখানে থেকে অটোরিকশা, সিএনজি বা হিউমেন হলার নিয়ে পৌছে যেতে পারেন মহামায়া ইকো পার্ক।

কোথায় থাকবেন

পর্যাটকদের থাকার জন্য মিরসরাই এ ভালোমানের তেমন কোন আবাসিক হোটেল নেই। তবে সৌদিয়া, সাইমুন সাধারণ মানের হোটেল পাবেন। ভালো মানের হোটেলে থাকতে হলে পর্যাটকদের চট্টগ্রাম সদরে ফিরে যেতে হবে।  

খৈয়াছড়া ঝর্না

মিরসরাই এর বড়তাকিয়া বাজারে গাড়ি বা সিএনজি নিয়ে ৪.২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত খৈয়াছড়া ঝর্ণা। বড়তাকিয়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে স্থানীয় লোকেদের কাছে জিজ্ঞাস করলেই তারা পথ দেখিয়ে দিবে। সেই পথ ধরে দেড় কিলোমিটার পাহাড়ি ঝিরির পথ এগিয়ে  খৈয়াছড়া ঝর্নায় যাওয়ার পথে পর্যাটকদের চারটি পাহাড়ের পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা, বাঁশের সাঁকো, আবাদি জমির আইল পাড় হয়েই পৌঁছাতে হয় ঝর্নার রানী “খৈয়াছড়া ঝর্নায়”। খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাওয়া আসার পথ একটাই। বিরৈয়াঢালা ব্লক থেকে বড়তাকিয়া কুণ্ডুর হাট ব্লককে ২০১০ সালে সরকারি জাতীয় উদ্যানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নয়টি ধাপে বয়ে যাওয়া খৈয়াছড়া ঝর্নাকে বাংলাদেশের ঝর্নার রানী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। খৈয়াছড়া ঝর্নার পাহাড়ের উপরে সারা বছর প্রাকৃতিক উপায়ে আগুন জ্বলতে থাকে, যা কিনা বৃষ্টির মধ্যেও জ্বলে। পর্যাটকেরা চাইলে ঝর্নার প্রতিটা ধাপ পাড় হয়ে পাহাড়ের উপরে উঠতে পারেন, কিন্তু পিচ্ছিলতার কারনে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রাকৃতিক দুঃসাহসিকতা প্রিয় পর্যাটকদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত জায়গা। নান্দনিক প্রাকৃতিক খৈয়াছড়ার এই নয় স্তরের ঝর্ণার সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে দেশ এবং বিদেশ থেকে অনেক পর্যাটকেরা এসে থাকেন।

কি খাবেন

দিন শেষে ঝর্নার প্রকৃতি উপভোগ করার পরে পর্যাটকেরা খাবার খাওয়ার জন্য খৈয়াছড়া বাজারে মাঝারি মান সম্মত রান্না করা খাবার খেতে পারেন। এছাড়াও পর্যাটকেরা চাইলে ঝর্নায় যাওয়ার পূর্বে খাবার রেস্তোরাঁ গুলোতে তাদের পছন্দের খাবার এর ওয়ার্ডার দিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু এটা খেয়াল রাখতে হবে বিকাল ৫টায় খৈয়াছড়া বাজারের সব রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যায়। পর্যাটকেরা চাইলে সাথে খাবার নিয়ে যেতে পারেন। 

কোথায় থাকবেন

পর্যাটকদের রাতে থাকার জন্য খৈয়াছড়ায় তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তাই পর্যাটকদের মিরসরাই বারৈয়ারহাটে অথবা সীতাকুণ্ডতে কিছু নিম্ন মানের হোটেল পাবেন। তবে বেশ ভালো মানের হোটেলে থাকতে হলে চট্টগ্রাম সদরে ফিরে যেতে হবে।

ছুটি খাঁ মসজিদ

ছুটি খাঁ মসজিদ চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের পরাগলপুর মৌজার দেওয়ানপুর গ্রামে অবস্থিত। অধুনা ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও দুই ঈদের দিন এবং প্রতি শুক্রবার জুমার দিন এখানে দেশ বিদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সমাগম ঘটে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্যতম এই প্রাচীন মসজিদ দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে সারা বছর বিপুল পরিমাণ পর্যটকের আগমন ঘটে মীরসরাইয়ে ।

পাড়ে মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ জনসাধারণের কাছে ছুটি খাঁর দিঘি নামে পরিচিত এক পুকুরের পূর্ব পাড়ে পরিলক্ষিত হয়। মসজিদের কেন্দ্রীয় মিহরাব ও দুটি পার্শ্ব মিহরাবে পোড়ামাটির নকশা এবং শিকল ও ঘণ্টার মোটিফ দ্বারা সুশোভিত ছিল। এখানে ছয় গম্বুজবিশিষ্ট হোসেন শাহী আমলের মসজিদের অস্তিত্ব ছিল যেটির তিন খিলানযুক্ত প্রবেশপথ তিন মিহরাবের সমান্তরালে পশ্চিম দেওয়াল অবধি বিস্তৃত ছিল। মসজিদে নামাজের স্থানটি দু’স্তম্ভপথ দ্বারা তিনটি আইলে বিভক্ত ছিল।

কিভাবে যাবেন

যে কোনো এক ছুটির দিনে যাওয়া যায় এখানে, তবে অন্যান্য দিনেও যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম শহর থেকে যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টা, সকালে রওনা দিয়ে বিকেলেই ফিরে আসা যায়। আবার ইচ্ছা করলে দুপুরবেলায় জোহর এর নামাজটিও সেখানেই আদায় করে নিতে পারবেন। চট্টগ্রাম শহরের মাদারবাড়ি শুভপুর বাসষ্ট্যান্ড থেকে চয়েস বা উত্তরা বাসে করে জোরারগঞ্জ বাজাারেই নামতে পারবেন, ভাড়া নিতে পারে ৮০-১০০ টাকা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে বারইয়ারহাট নেমে সিএনজি যোগে জোরারগঞ্জ আসলে দেখা মিলবে সড়কের পাশে দন্ডায়মান ঐতিহাসিক ছুটি খাঁ মসজিদটির।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here