কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দক্ষিণে পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে অবস্থিত উখিয়া উপজেলা। এর আয়তন ২৬১.৮০ বর্গ কিলোমিটার। এ উপজেলার উত্তরে রামু উপজেলা, পূর্বে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ও মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ, দক্ষিণে টেকনাফ উপজেলা এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। অতীতে উপজেলাটি গভীর জঙ্গল ছিল। উখিয়া থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। বর্তমানে ৫টি ইউনিয়ন রয়েছে এই উপজেলায়। এখানে বসবাস করে চাকমা, রাখাইন আদিবাসির জনগোষ্ঠী। তাদের ভাষার প্রভাব স্থানীয় ভাষায় লক্ষ্য করা যায়। এই উপজেলার মানুষেরা সাধারনত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। উখিয়ার অধিবাসীদের প্রধান পেশা কৃষি। এখানের উল্লেখযোগ্য চাষাবাদ ফসল ধান, পান, সুপারি, তরমুজ, গোল আলু, ইত্যাদি। সোনারপাড়া সুপারি তার স্বাদ ও আকারের জন্য কক্সবাজার অঞ্চলে বিখ্যাত। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার মানুষ নিয়মিত মাছ ধরতে জীবনকে বাজী রেখে গভীর সমুদ্রে চলাচল করে। উখিয়ার উল্লেখযোগ্য জলাশয় নাফ নদী ও রেজু খাল। এখানে বেশ কিছু লবণ চাষের মাঠ রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এই উপজেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মানীয় স্থান।
কালো রাজা শুড়ঙ্গ
কক্সবাজারের রামু উপজেলার উখিয়াঘোনা পাহাড়ের ঝিরি বা পাহাড়ি নালা পার হয়ে যাওয়ার পর দেখার মতো ৩০০ বছর পুরাতন ঐতিহাসিক দার্শনিক শুড়ঙ্গ এটি। যার অপর নাম “কানা রাজার শুড়ঙ্গ”। শত্রুর কাছ থেকে আত্মগোপন করার জন্য এই শুড়ঙ্গটি তৈরি করে। ৩৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের শুরঙ্গ এটি, যেখানে ৭০ ফুট পায়ে হেঁটে যাওয়ার পর হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয়। সেখানে ১০০ ফুট ভিতরে আছে একটি বড় পুরাতন একটি রঙ্গশালা বা মঞ্চ। যেটাকে অনেকে বৈঠকখানাও বলে। দেওয়ালে সাজিয়ে রাখা আছে অনেক ছবি। শুরঙ্গের থেকে একটু ভেতরে গেলেই দেখা যায় চারটি শুরঙ্গের পথ যেটি শত্রুর আক্রমণের হাত থেকে বাঁচে বেড়িয়ে যাবার জন্য ব্যাবহার করা হতো। বর্তমানে পাহাড় ধসে আংশিক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে লুকিয়ে আছে জানা-আজানা নানা রহস্য। “কক্সবাজারের ইতিহাস” নামের একটি গ্রন্থে এই শুরঙ্গের বর্ণনা দেওয়া আছে।
কিভাবে যাওয়া যাবে
রামু চৌমুহনী ষ্টেশন থেকে সিএনজি আটোরিকশায় কাউরখোপ ইউনিয়নের উখিয়ার ঘোনার ড্রোমর ঘোনাতে শফির বিল গ্রামের পাশে নিদানিয়া পাহাড়ে খোজ মিলবে এই পুরাতন গুহার।
কুমিরের খামার
টেকনাফ থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে উখিয়া টেলিভিশন সম্প্রচারকেন্দ্রের পূর্ব দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের পাহাড়ি পথে প্রিয় দুই কিলোমিটার গেলেই ঘুমধুম পাহাড়ি এলাকায় দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কুমির প্রজনন কেন্দ্র। প্রায় ৩০ একর ভুমিতে গড়ে ওঠা ‘আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড’ নামের কুমির প্রজননকেন্দ্রে গেলে দেখা পরে লোনা পানির কুমির ডিম দিচ্ছে উঁচু পাহাড়ে। খামারের বিভিন্ন বেষ্টনীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে শতাধিক কুমির। খামারটির চারদিক দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। পাহাড়ের হ্রদের পানির মুক্ত পরিবেশে কুমিরদের দৌড়ঝাঁপ পর্যাটকদের আনন্দিত করে তুলে। পাহাড়ের হ্রদের তীরেও বেশ কয়েকটি কুমির দেখতে পাওয়া যায়। খামারের কর্মচারীদের কেউ সংগ্রহ করছেন কুমিরের ডিম আর কেউবা কুমিরকে মুরগি বা গরুর মাংস খাওয়াচ্ছেন। এই খামারে ৪৭টি বড় কুমির ও ১৭০টি কুমিরের বাচ্চা রয়েছে। একটি ব্যতিক্রমী পর্যাটন কেন্দ্র এই কুমিরের খামারটি।
কিভাবে যাবেন
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা তুমব্রু গ্রামের উঁচু নিচু রাস্তায় রিকশায় যাওয়া যায়না। তাই উপজেলা টার্মিনাল থেকে সহজে পাওয়া যায় লোকাল মাইক্রোবাস বা সিএনজি এর মাধ্যমে গন্তব্যস্থানে পৌঁছানো সম্ভব।
কোথায় থাকবেন
কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে ভালোমানের হোটেল রয়েছে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল শৈবাল, লাবণী, প্রবাল ছাড়াও বেসরকারি হোটেলগুলোর মধ্যে হোটেল সী গাল, হোটেল দি কক্স টুডে, হোটেল সী প্যালেস, মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, জিয়া গেস্ট হাউজ, সোহাগ গেস্ট হাউজ, গ্রীন অবকাশ রিসোর্ট, নিট বেল রেস্ট হাউজ রয়েছে।
খাবার ব্যাবস্থা
কক্সবাজার শহরের যে কোন জায়গায় অথবা উখিয়া উপজেলা সদরে পছন্দ মতো যে কোন মানের রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন। পর্যটকদের খাবারের জন্য রয়েছে এখানে বেশ কিছু হোটেল ও রেস্তোরাঁ। খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পর্যাটক সেবার কাজে নিয়জিত থাকেন।