সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা জেলা বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম জেলা। শিল্প বাণিজ্য, প্রকৃতি ও লোকজ সংস্কৃতির এই অভূতপূর্ব মিলন ঘটেছে এই জেলায়। ভ্রমণপিপাসু, জ্ঞানপিপাসু এবং সৌন্দর্যপিপাসু মানুষদের জন্য খুলনা জেলা এক আকর্ষনীয় জেলা। সাজানো-গোছানো, প্রাকৃতিক আবহ , সংস্কৃতি ও বসবাসের উত্তম এই জেলাটি। এ জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই মনোমুগ্ধকর যা দেশি-বিদেশি পর্যটক দের আকর্ষণ করে। খুলনা জেলার আকর্ষনীয় ও দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর
খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর খুলনা জেলার শিববাড়ী অবস্থিত একটি জাদুঘর। এ জাদুঘরটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের তত্তাবধানে জাদুঘরটি পরিচালিত। আয়তনের দিক থেকে এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাদুঘর। এ জাদুঘরে উপস্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন যুগের মৃৎপাত্র, হিন্দু ও বৌদ্ধ মুর্তি, শিলালিপি, পোড়ামাটির ফলকচিত্র, অলংকৃত ইট, পোড়ামাটির বল, পোড়ামাটির গুটিকা ইত্যাদি। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত নানান প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন বিশেষ করে ঝিনাইদহের বারবাজার, যশোরের ভরত ভায়ানা এবং বাগেরহাটের খানজাহান আলী সমাধিসৌধ খননের ফলে প্রাপ্ত নানান দুর্লভ নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে এ জাদুঘরে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রত্নস্হল ও ঐতিহাসিক ইমারতের আলোকচিত্রও আছে ।
কাটকাটা পর্যটন কেন্দ্র
খুলনা শহরের কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাটকাটা বাজার সংলগ্ন সুন্দরবন ঘেঁষা এলাকাটি কাটাকাটা পর্যটন কেন্দ্র নামে পরিচিত। সুন্দরবনের অপরুপ দৃশ্য অবলোকন করার জন্য অসংখ্য মানুষ দক্ষিণবঙ্গের এই প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র ঘুরতে আসে। কাটকাটা লঞ্চঘাট সংলগ্ন স্থানটিকে কেন্দ্র করে মূলত পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে। সারাদিন পরিশ্রমের পর স্থানীয়রা একটু আরামের জন্য এখানে আসে। কাটকাটা পর্যটনকেন্দ্রটির একপাশে লোকালয় এবং অপরপাশে পৃথিবীর বিখ্যাত সেই ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন অবস্থিত। দাঁড় দিয়ে চালানো নৌকা কিংবা স্পিডবোটে করে সুন্দরবন ও এর আশেপাশে নৌবিলাস করা যায় এখান থেকে। কাটকাটা পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে ওঠার মূল কারণ হল সুন্দরবন। এজন্য দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবনকে কাছ থেকে দেখার জন্য ছুটে আসে। সুন্দরবন দেখার জন্য বাংলাদেশে আরো কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। তবে এ কেন্দ্রটির বিশেষত্ব হল এখানে ঘুরে দেখার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। একবারে মনখুলে ঘুরে ঘুরে সুন্দরবনের সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। কিছু সময়ের জন্য প্রকৃতি, বন আর সুন্দরবনের প্রাণিদের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে।
শহিদ হাদিস পার্ক
বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হল খুলনা। এ শহরের ডাকবাংলার প্রানকেন্দ্র পি সি রায় (প্রফুল্ল চন্দ্র রায়) রোডে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক খুলনা শাখার পশ্চিম পার্শ্বে একটি পার্ক শহীদ হাদিস পার্ক অবস্থিত। ১৮৮৪ সালে খুলনা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে শহরবাসীর বিনোদনের জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ‘খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্ক’ নামে প্রতিষ্ঠা করে। খুলনা হাদিস পার্কের নামকরণের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস জড়িত। ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত শেখ হাদিসুর রহমান বাবুর নামে নামকরণ করা হয়। এ পার্কে রয়েছে একটি সুদৃশ্য শহিদ মিনার যা ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে তৈরি করা হয়েছে।
খান জাহান আলী সেতু
বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম সেতু হল খান জাহান আলী সেতু বা রূপসা সেতু। খুলনার রূপসা নদীর উপর নির্মাণ করা হয় এই সেতুটি। রূপসা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সকল জেলা ও মংলা সমুদ্র বন্দরের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবার কারণে একে খুলনা শহরের প্রবেশ দ্বারও বলা হয়। জাপানি সহায়তায় নির্মিত রূপসা সেতু সকল উৎসব এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে খুলনাবাসীর জন্য চমৎকার এক দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। নির্মল বাতাস আর অপরুপ সৌন্দর্যের কারণে সেতুটি খুলনাবাসীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নদী ও বিশুদ্ধ বাতাসকে কেন্দ্র করে নানা বয়সী মানুষ প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত আড্ডায় মেতে ওঠে এখানে। বাতাসে রূপসা নদীর ঢেউগুলো যখন দুই পাড়ে আছড়ে পড়ে সে দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে উঠা বাতিগুলো মোহনীয় এক পরিবেশ আচ্ছন্ন ফেলে সেতুটিকে। ব্যস্ত শহুরটাকে মোহমীয় আলোকসজ্জা এক সৌন্দর্যপুরতে রূপ দান করে।রূপসা সেতুর দৈর্ঘ্য ১.৬০ কিলোমিটার। ব্রিজে পথচারী ও অযান্ত্রিক যানবাহনের যাতায়াতের জন্য রয়েছে বিশেষ লেনের ব্যবস্থা। এছাড়া মূল সেতুতে উঠার জন্য সেতুর দুই প্রান্তে দুটি করে মোট চারটি সিঁড়ি রয়েছে। সেতুর পশ্চিম প্রান্তে নদীর পাড়ে সবসময়ই দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে। সেতুর দুই পাশে নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বেশি ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি আর চানাচুরের দোকান।
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি
খুলনা জেলার রূপসা নদীর পাড় স্বাধীন বাংলাদেশের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। রূপসা নদীর পূর্বপাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব ও নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য আত্মত্যাগ তাকে ভূষিত করেছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সামরিক সর্বোচ্চ খেতাবে। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি একটি যুদ্ধ জাহাজে অবস্থানকালীন শত্রুপক্ষের বিমান হামলায় শহীদ হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মৃত্যু আসন্ন জেনে এ বীর সন্তান পালিয়ে যান নি কাপুরুষের মত। এজন্য জাতি আজও গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে এই বীরসেনাকে। প্রতিবছর রুহুল আমিনের শাহাদাৎ বার্ষিকী ও সশস্ত্রবাহিনী দিবসে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন নানা কর্মসূচির আয়োজনের মাধ্যমে রুহুল আমিনের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে খুলনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বাংলাদেশর একমাত্র রাজনীতি মুক্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি গেজেটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারি সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯১ সালের ২৫ নভেম্বর ৪টি পাঠ্য বিষয়ের ৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে।বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ টি স্কুল ও ২ টি ইন্সিটিউট এর অধীনে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার জন এবং প্রতিবছর ২৮ টি পাঠ্য বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। খুলনা শহরে থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কাছাকাছি আসার জন্য এটি খুলনা শহরের অনন্য জায়গা।
ভূতিয়ার বিল
আকাশে ভাসমান মেঘপুঞ্জ আর নীচে দিগন্ত জোড়া পদ্মফুলের মেলা দুরন্ত কৈশরকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। এমনি একটি জায়গা হল ভুতিয়ার বিল। খুলনা শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটরের দূরে তেরখাদা উপজেলার আঠারবাকী নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নড়াইল জেলার অংশ বিশেষ নিয়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে ভূতিয়ার বিল। বিলটি প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর হলেও ৪০ থেকে ৫০ হেক্টর জমিতে পদ্মফুল ফোটে। বাকি অংশ হোগলা আর শেওলাতে ঠাসা। বিস্তৃত জলরাশির বুকে দলবেধে যতদূর চোখ যায় শুধু পদ্ম আর পদ্ম। জলের ওপর বিছানো সবুজ পাতা ভেদ করে লাল-সাদা-গোলাপী পদ্মগুলো যেন গায়ে গা লাগিয়ে সৌন্দর্যের ডালি খুলে বসেছে। সৌন্দর্যের ডালি মেলানো এই পদ্মের সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হবে। ভাসমান একেকটি পদ্মের রূপশোভা অভিভূত করে যে কাউকে। জলজ ফুলের রানি পদ্মের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে তুলতে পারেন অসংখ্য ছবি। প্রকৃতির এই যৌবনাবতী রূপ-রসের সৌন্দর্য শুধু প্রকৃতিপ্রেমীর কাছে নয়, পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিদেরও করেছে বিমোহিত। তাই পেলে যে কেউ ছুটে আসে তেরখাদার বিখ্যাত পদ্মবিলে।
- কবি কৃষ্ণচন্দ্র ইনস্টিটিউট
- ওআইসি রিসোর্ট
- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- খুলনা জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পার্ক (গিলাতলা পার্ক/বনবিলাস)
- জাতিসংঘ শিশু পার্ক
- গল্লামারী লিনিয়ার পার্ক
- শেখ রাসেল ইকোপার্ক
- রানা রিসোর্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
- সোনাডাঙ্গা সোলার পার্ক
- শিরোমণি স্মৃতিসৌধ
- পিঠাভোগ, বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসতভিটা
- ধামালিয়া জমিদার বাড়ি
- প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বাড়ি
- কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র
- মসজিদকুঁড় মসজিদ