ভ্রমণবিলাসী মানুষদের কাছে হাকালুকি হাওর অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। সিলেট জেলার় ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার ও মৌলভীবাজার জেলার় বড়লেখা, কুলাউড়া এই ৫টি উপজেলা নিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ এই জলাভূমিটি বিস্তৃত। ছোট-বড় ২৪০ টি বিল ও ছোট-বড় ১০ টি নদী নিয়ে গঠিত হাকালুকি হাওর বর্ষাকালে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর এলাকায় পরিণত হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে অপূর্ব লীলাভূমি হাওরটি বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে।

২৪০টি বিল নিয়ে গঠিত হাকালুকি হাওরের বিলগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বর্ষাকালে এই হাওরে ধারণ করে এক অনবদ্য রূপ। চারদিকে শুধু পানি আর পানির খেলা। সে এক অপরূপ দৃশ্য। শীতকালে হাওরের দিগন্ত বিস্তৃত প্রাকৃতিক দৃশ্য ও বিলের কান্দিগুলো সত্যিই দৃষ্টিনন্দন। চারিধারে জেগে থাকা সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়া কিঞ্চিত উঁচুভূমি বিলের পানিতে প্রতিচ্ছবি ফেলে সৃষ্টি করে অপরূপ দৃশ্যের। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় হাওরের জলরাশির মাঝে সূর্যের প্রতিচ্ছবি বেশ মনোমুগ্ধকর। বর্ষা এবং শীত উভয় ঋতুই সিলেটে ঘুরে বেড়ানোর জন্য উপযোগী। শীতকালে অতিথি পাখিরা সারি বেঁধে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসতে থাকে বিলগুলোতে। পরিযায়ী পাখিদের আগমনে হাওর যেন হয় স্বর্গোদ্যান।
এছাড়া হাওরের স্বাদু ও মিঠাপানির বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে, আইড়, চিতল, বাউশ, পাবদা, মাগুর, শিং, কৈসহ আরও নানা প্রজাতির দেশীয় বিলুপ্তির পথের মাছগুলো। হাওরের বিস্তির্ন ভূমি, বিল নির্ভর মানুষের জীবনযাত্রা এবং অথিতি পাখির আহ্বানে ভ্রমনপিয়াসীরা হাকালুকি হাওরে ছুটে আসে।
হাকালুকি হাওর ভ্রমণের সময়
অতিথি পাখি দেখতে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস হচ্ছে হাকালুকি হাওর ভ্রমণের আদর্শ সময়। এ সময় হাওরের চারপাশ অতিথি পাখির কোলাহলে মুখর হয়ে থাকে। আর বর্ষাকালে হাওর সমুদ্রের রূপ ধারণ করে। তাই বর্ষাকালে হাওরের মজা নিতে চাইলে জুন-আগস্ট এই সময় আসতে হবে।
কিভাবে যাবেন
১. ঢাকা থেকে কুলাউড়া বাসযোগে
ঢাকা থেকে সিলেটগামী যে কোন বাসে চলে আসতে পারেন কুলাউড়াতে। ঢাকার ফকিরাপুল, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালি বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটের বাসগুলো ছেড়ে যায়৷ গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি ও এনা পরিবহনের এসি বাস যাতায়াত করে। এই পরিবহনগুলোতে কুলাউড়া পর্যন্ত ভাড়া সাধারণত ৭০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এনা পরিবহনের নন এসি বাস জনপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়ায় পাবেন।
২. ঢাকা থেকে ট্রেনে করে কুলাউড়া যেতে
কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন। শ্রেণী ভেদে জনপ্রতি ট্রেনে যেতে ভাড়া ২৮০ থেকে ৬৩৯ টাকা।
৩. কুলাউড়া থেকে হাকালুকি হাওর
কুলাউড়া থেকে অটোরিক্সা বা রিক্সা ভাড়া করে সরাসরি হাওরে যাওয়া যায়। কুলাউড়া থেকে হাকালুকি হাওরে যেতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা অটোরিক্সা ভাড়া লাগে এবং রিকশা ভাড়া লাগে ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকার।
কোথায় থাকবেন
হাওরে বিল ইজারাদারদের কুটিরগুলোতে বিল মালিকের অনুমতি নিয়ে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। বিল এলাকায় জোছনা রাতে তাঁবু ফেলে ক্যাম্পিং করার মুহুর্তগুলো আপনার স্মৃতিপটে আজবীন হয়ে থাকবে অমলিন। এছাড়া পার্শবর্তী উপজেলা শহর বড়লেখায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
হাকালুকি হাওর ভ্রমণের সময় নৌকার মাঝির সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় বাজার করে নিলে মাঝিই আপনাদের রান্না করে খাওয়াবে। এছাড়া নৌকায় উঠার সময় বিস্কুট, চা, পাউরুটি, খাবার পানি ইত্যাদি হালকা খাবার নিয়ে ভ্রমণ করতে পারেন। যদি কোন হাওরের কর্মজীবী মানুষদের ম্যানেজ করতে পারেন তবে অল্প টাকায় তাদের সাথে ভাত আর মাছের ঝোল দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারবেন। হাওরে বেশ অল্পমূল্যে গরু মহিষের দুধ পাওয়া যায়।
বিশেষ সতর্কতা
হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। একারণে কোন স্থানে ভ্রমণের পূর্বে বর্তমান ভাড়া ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিবেন। ওয়েবসাইটে যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রদত্ত নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্য চলো ঘুরি কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।