সীতাকুণ্ড
চট্টগ্রাম এর উপজেলাগুলোর মধ্যে সীতাকুন্ডু সব থেকে অপরূপ সৌন্দর্যের বেষ্টনী নিয়ে আছে যার আয়তন ২৭৩.৪৭ বর্গ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম সদরে অলংকার থেকে স্থল পথে বাস, গাড়ি বা সিএনজি নিয়ে সীতাকুণ্ড যাওয়া যায়, তাছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথেও সীতাকুণ্ড যাওয়া যায়। সীতাকুণ্ডের পাহাড়, লেক, ঝর্না, নদী সব মিলিয়ে প্রকৃতির এমন উদারতা জড়ানো সৌন্দর্য দেশে কোথাও সচরাচর খুজে পাওয়া যায়না। এখানে পর্যাটক কেন্দ্রের মধ্যে আছে হিন্দুদের তীর্থ স্থান, সুপ্রাচীন নিদর্শন আর রয়েছে অপূর্ব প্রাকৃতিক সমাহার। যেখানে এক দিনে যেয়ে ঘুরে আবার ঐ দিনেই ফিরে আসা যায়।
চন্দ্রনাথের পাহাড়
সীতাকুণ্ড উপজেলার সদর থেকে পায়ে হেঁটে, রিকশা নিয়ে বা অটো রিকশা নিয়ে কিছুদূর গেলেই দেখা মিলবে চন্দ্রনাথের পাহাড়। প্রায় ১২০০ ফুট উঁচু চন্দ্রনাথের পাহাড়ে উঠার জন্য দুইটা পথ আছে, পাহাড়ে উঠার জন্য সিঁড়ি হচ্ছে একটি আর ২য় টি হচ্ছে ট্র্যাকিং। চারিদিকে সবুজের সৌন্দর্য আর পাহাড়ের পাশের পাহাড়ে ছোট ছোট অনেক মন্দিরের দৃশ্য উপভোগ করতে করতে প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটে পাহাড়ের উপরে উঠা যায় । পাহাড়ের মাঝামাঝি দূরত্বে চন্দ্রনাথের মন্দিরের দেখা মিলে। মন্দিরের পাশে ছোট টং দোকানে হালকা কিছু খাবারের পাশাপাশি মন্দিরের সামগ্রী কিনতে পাওয়া যায়। ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে পাহাড়ে সবুজের গালিচা উপভোগ করে উঠতে গিয়েই পাহাড়ের মাঝে দেখা মিলবে জুম চাষ, সাথে কিছু আবাদি জমি আর বাণিজ্যিক প্রয়োজনের উদ্দেশ্যে ফুল চাষের বাগান। ঘাসের মাঝে লুকিয়ে থাকা জোঁক এবং পাহাড়ে মাঝে ছিনতাইকারীর কবলের হাত থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। চন্দ্রনাথের পাহাড়ে উঠার পূর্বে কিছু হালকা খাবার আর পানি সাথে নিয়ে নেওয়া ভালো, যাতে ক্লান্তি এবং সতেজটা দুটোই পাওয়া যায়।
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত বা মুরাদপুর বীচে সিএনজি, বা গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। যাওয়ার পথে পর্যাটকদের মাঝে মাঝে সিএনজি পরিবর্তন করতে হয়, কারন এক লাইনের সিএনজি অন্য লাইনে যেতে পারেনা। অনেকের কাছে এই সমুদ্র সৈকত মুরাদপুর বীচ নামে পরিচিত। অসাধারণ সৌন্দর্য এই সৈকতের পাড়ে কেওড়ার বন, আর ঐ বনের মাঝ থেকে বয়ে গিয়েছে ছোট ছোট খাল। খালের চারদিকে দেখা যায় কেওড়া গাছের শ্বাসমূল। জোয়ারের সময় পানিতে ভোরে যায় খাল গুলো তখন সমুদ্রের গভীরতা মাপা অনেক কঠিন। ভাটার সময় সমুদ্রের পানি স্পর্শ করতে হলে সামনে হাঁটু সমান কাঁদার মধ্যে খানিকটা হেঁটে যেতে হয়। অনেকটা জনমানবহীন নিরিবিলি সৈকতের অদুরে দেখা মিলে ছোট ছোট জাহাজ আর মাছ ধরার ট্রলার। পর্যাটকেরা চাইলে গুলিয়াখালী বীচ থেকে সন্দীপ উপজেলায় ঘুরে আসতে পারেন। গুলিয়াখালী বীচে পর্যাটকদের খাবার খাওয়ার মত তেমন কোন সুবিধা নেই, বীচে আছে শুধু একটি দোকান। পর্যাটকেরা চাইলে সীতাকুণ্ড থেকে খাবার সাথে নিয়ে আসতে পারেন, কিন্তু পর্যাটকদের একটু খেয়েল রাখতে হবে যে ময়লা আবর্জনায় আমাদের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট না হয়। গুলিয়াখালী বীচে পর্যাটকদের থাকার কোন ব্যবস্থা নেই তাই থাকার জন্য তাদের সীতাকুণ্ড ফিরে আসতে হবে। সন্ধার পরে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত থেকে ফেরার জন্য সহজে কোন পরিবহণ পাওয়া যায়না, তাই পর্যাটকেরা চাইলে যে সিএনজি তে করে এসেছিলেন তার চালকের ফোন নাম্বার নিয়ে নিতে পারেন অথবা সিএনজি রিজার্ভ করে নিতে পারেন।
ভাটিয়ারী লেক
সীতাকুণ্ড উপজেলার অপরূপ সৌন্দর্যের মধ্যে ভাটিয়ারী এর সৌন্দর্য অনাবিল। চট্টগ্রাম সদর গেট থেকে অথবা সীতাকুণ্ড থেকে খুব সহজে বাস, গাড়ি বা সিএনজি নিয়ে ভাটিয়ারী বাস স্ট্যান্ড থেকে ২ কিলোমিটার উত্তরে পাহাড়ি উঁচু রাস্তা দিয়ে যেতে হয় ভাটিয়ারী লেকে। দুইদিকে আঁকাবাঁকা পাহাড়ের পাহাড়ি পাদদেশের জমে থাকা পানি থেকে ভাটিয়ারী লেকের উৎপত্তি। লেকের পাড়ে বাঁধানো ঘাটে আছে প্যাডেল বোট, ইঞ্জিন চালিত বোট আর স্পিড বোট। পর্যাটকেরা চাইলে পছন্দের বোট নিয়ে লেকের চারদিকে ঘুরে আসতে পারেন। বোট নিয়ে ঘোরার সময় দুদিকের পাহাড়ের মাঝে নানা প্রজাতির অনেক পাখির কোলাহল আর ছোটাছুটি। সারাদিনের জন্য ৬০০ টাকা ফি দিয়ে বর্শি নিয়ে মাছ ধরতে পারেন। লেকের উপরে দেখা মিলে নানা প্রজাতির মাছ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিচালিত এলাকা বলে লেকটি নিরাপত্তায় আওতাধীন। এছাড়াও লেকের পাশেই আছে ভাটিয়ারী গলফ ক্লাব। পর্যাটকেরা চাইলে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করে ঘুরে দেখতে পারেন, চারিদিকে পাহাড়ি বনের মাঝে সবুজ গালিচা বিছানো গলফ ক্লাব। পর্যাটকদের পছন্দ মত খাবার খাবার জন্য এখানে আছে ভালো মানের ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, আর হোটেল। ভাটিয়ারী সানসেট পয়েন্টে বসে পর্যাটকেরা চাইলে খাবারের সাথে সাথে চারদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। পর্যাটকদের রাত্রি যাপন করার জন্য ফিরে আসতে হবে সীতাকুণ্ড বাজারে অথবা চট্টগ্রাম সদরে।
বাশঁবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
সীতাকুণ্ড বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকে সিএনজি নিয়ে ২.৫ কিলোমিটার পশ্চিমে সরু পিচ ধালা পথে দিয়ে গেলেই পৌঁছে যাবেন বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। বেরী বাঁধ পেরিয়ে সমুদ্র সৈকতের দিকে যেতেই বাম দিকে ঝাউ বাগান, কয়েক গজ দক্ষিণে বাঁশবাড়ীয়া ফেরি ঘাট আর তার পাশে রয়েছে কেউড়া গাছের বাগান। সমুদ্র সৈকতে জেগে উঠেছে বিশাল বালির মাঠ আর ঝাউবন। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে পর্যাটকদের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে একটি লোহার ব্রিজ। এছাড়া সমুদ্রের ভিতরে প্রায় আধা কিলোমিটার হেঁটে যাওয়া যায়। তবে সমুদ্রের গভীরতা সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নেই ওখানের স্থানীয়দের তাই পর্যাটকদের সমুদ্রে স্নান এর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা অনেক জরুরী। পর্যাটকেরা চাইলে স্পিডবোটে ঘুরতে পারেন। সমুদ্রের মাঝে দেখা মিলে সারি সারি নোঙ্গর ফেলা জাহাজ। ভ্রমণ শেষে পরিবহণ সুবিধা পাওয়ার জন্য সন্ধ্যার পরেই পর্যাটকদের গন্তব্যে ফিরে আসতে হবে। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে খাবার খাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটা খাবার দোকান আছে। শীতের মৌসুমে ভ্রমণ করলে পর্যাটকেরা কিনে খেতে পারেন খেজুর গাছের রস।
কোথায় থাকবেন ও খাবেন
সীতাকুণ্ড পৌরসভা বাজারে পর্যাটকদের থাকার জন্য কিছু সাধারন মানের হোটেল আছে। তারমধ্যে হোটেল সৌদিয়া এবং হোটেল সাইমুন মানে কিছুটা ভালো। সীতাকুণ্ডতে খাবারে জন্য বেশ কিছু খাবার রেস্তোরাঁ আছে। সেখানে আল আমীন হোটেল, ভোজ রেস্টুরেন্ট এর খাবারের মান অনেকটা ভালো। পর্যাটকেরা চাইলে থাকার আর খাবার এর ভালো সুবিধা জন্য সীতাকুণ্ড বাজার থেকে বাস, টেম্পু, গাড়ি বা সিএনজি নিয়ে চট্টগ্রাম সদরে ফিরে আসতে পারেন।
কিভাবে যাওয়া যায়
বাঁশবাড়ীয়া সমৃদ্র সৈকত বাস ও সিএনজি যোগে যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট থেকে সরাসরি বাঁশবাড়ীয়া পর্যন্ত ৭ নং গাড়ি রয়েছে। ভাড়া পড়বে ৩৫ টাকা। কিংবা এ.কে খান গেইট হতে বড় বাসে (২০-৩০ টাকা ভাড়া) করে যাওয়া যায়। ইচ্ছে করলে আপনি হেটে অথবা রিকসা কিংবা সিএনজিতে ও যেতে পারবেন। রিকসা ভাড়া-৩০ টাকা। ফেরার পথে বাঁশবাড়ীয়া থেকেই ঢাকাগামী বা চট্টগ্রাম বাসে উঠে যেতে পারেন।
সীতাকুন্ড ইকোপার্ক
সীতাকুন্ড উপজেলা পরিষদ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এক কিলোমিটার দক্ষিনে সীতাকুন্ড পৌরসভার মধ্যে ইকো পার্কের অবস্থান। এ পার্কের একটি বৈশিষ্ট হল এখনে আছে বিভিন্ন ধরনের বিরল প্রজাতির বৃক্ষ । নিয়মতান্ত্রিকভাবে পাহাড় ও এর পাদদেশে অত্যন্ত সুন্দর ভাবে গড়ে তোলা পার্কে রয়েছে প্রাকৃতিক র্ঝনা।জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় এ পার্কটি বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে।
কিভাবে যাওয়া যায়
সীতাকুন্ড উপজেলা পরিষদ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এক কিলোমিটার দক্ষিনে সীতাকুন্ড পৌরসভার মধ্যে ইকো পার্কের অবস্থান। রিকসা কিং বা সিএনজি করে সীতাকুন্ড উপজেলা পরিষদ থেকে পৌঁছা যায়।
ছোট দারোগার হাট স্বহস্রধারা
ছোট দারোগার হাট স্বহস্রধারা হলো চট্টগ্রাম জেলা সীতাকুন্ড উপজেলা, ২নং বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন এর ছোটদারোগার হাট পাহাড়ে উপর থেকে পতিত পানির র্ঝনা। সারা বছর ধরে এই র্ঝণা থেকে পানি প্রবাহিত হয়। পাহাড় আর নীল আকাশ মিলে মিশে একাকার হয়েছে এখনে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাস যোগে বড় দারোগার হাট বাজার নেমে সি.এন.জি যোগে ছোটদারোগার হাট বাজার, ছোট দারোগার হাট বাজার থেকে রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে রিক্স যোগে পাহাড় পর্যন্ত তার পর পায়ে হেটে।চট্টগ্রাম থেকে বাস যোগে বড় দারোগার হাট বাজার নেমে সি.এন.জি যোগে ছোটদারোগার হাট বাজার, ছোট দারোগার হাট বাজার থেকে রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে রিক্স যোগে পাহাড় পর্যন্ত তার পর পায়ে হেটে।
সীতাকুন্ড সমুদ্র সৈকত ও কুমিরা ফেরিঘাট
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিরা নামক স্থানে ফেরিঘাটটি অবস্থিত। ভ্রমন পিপাসুদের জন্য একটি দর্শনীয় জায়গা এটি।